ফার্গি টাইম নয়, ‘জাবি টাইম’

১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩। প্রবল পরাক্রমশালী বায়ার্ন মিউনিখের মুখোমুখি বেয়ার লেভারকুজেন। ৮৬ মিনিটে করা লিওন গোরেৎস্কার গোলটাকে বায়ার্নের জেতার জন্য যথেষ্ট বলেই মনে হচ্ছিল। যোগ করা সময়ের একেবারে শেষ দিকে এসে ভুলটা ভাঙল। ভাঙালেন এজেকিয়েল পালাসিওস। গোল করে লেভারকুজেনকে ফেরালেন সমতায়। ম্যাচটা জাবি আলনসোর দল শেষ করল ২-২ সমতায় থেকে।

সেই বেয়ার ‘নেভারলুজেন’ এর শুরু। এরপর থেকে এই মধ্য মে পর্যন্ত যোগ করা সময়ে বেয়ার লেভারকুজেন নিজেদের হার ঠেকিয়েছে, জয় তুলে নিয়েছে বহুবার। তার সবশেষ নজিরটার দেখা মিলল গত রাতে। রোমার কাছে ২-০ গোলে হারটাকে মনে হচ্ছিল লেভারকুজেনের নিয়তি। সেটা হয়ে গেলে ৫৯ বছর আগে করা বেনফিকার সব প্রতিযোগিতায় অপরাজিত থাকার রেকর্ডটা অক্ষতই থেকে যেত। সেই ম্যাচে শেষ বাঁশিটা বাজল স্কোরলাইন যখন ২-২ সমতায়। প্রায় আট মাস আগের ওই বায়ার্ন ম্যাচের মতো! তাতে জাবি আলনসোর দল রেকর্ডটা একান্তই নিজেদের করে নিল। 

একটা ভুল ভাঙিয়ে দেওয়া যাক। বেয়ার ‘নেভারলুজেন’এর শুরু অবশ্য ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে নয়। ১২ আগস্ট থেকে। ডিএফবি পোকালের ম্যাচে টেওটনিয়া অটেনসেনের বিপক্ষে ৮-০ গোলে জিতে লেভারকুজেন শুরু করেছিল তাদের ৪৯ ম্যাচের অপরাজেয় যাত্রা। সেপ্টেম্বরের ওই বায়ার্ন ম্যাচটা তাদের আরেকটা ট্রেন্ড শুরুর দিনের গল্প। ‘জাবি টাইম’ শুরুর গল্প।

যোগ করা সময়ে গোল করাটা ফুটবল ইতিহাসে নতুন কিছু নয় মোটেও। কোনো দল সেটাকে অভ্যাস বানিয়ে ফেলাটাও নতুন নয়। কিংবদন্তি স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের অধীনে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের এমন অভ্যাস ছিল। যে কারণে ৯০ এর আশেপাশের সময়টাকে ইউনাইটেড-ঘেঁষারা ‘ফার্গি টাইম’ বলেও ডাকতেন!

তবে সেটাকে বুঝি এখন লেভারকুজেন-ভক্তরা ‘জাবি টাইম’ও বলে বসতে পারেন। কেন? কারণটা সহজ, বায়ার্নের বিপক্ষে ওই ২-২ গোলে ড্র হওয়া ম্যাচের পর থেকে ৯০ বা তার চেয়ে বেশি সময়ে বেয়ার লেভারকুজেন গোল করে ম্যাচ বাঁচানো, জয় তুলে নেওয়াটাকে অভ্যাসেই পরিণত করে ফেলেছে! এই সময় দলটা গোল করেছে ১০টি। আর যদি হিসেব করেন পিছিয়ে পড়ে জয় নেওয়াকে, তাহলে অকূল পাথারে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি আপনার; বেয়ার লেভারকুজেন শেষ আট মাসের প্রতিটিতে কমপক্ষে একটা ম্যাচ পিছিয়ে পড়ে জিতেছেই। 

তার সবশেষটার দেখা মিলেছে গতকাল। রোমার মাঠ এস্তাদিও অলিম্পিকোয় জিতে এসে নিজেদের মাঠে কি-না হেরেই যেতে বসেছিল লেভারকুজেন। ৮০ মিনিট পর্যন্ত পিছিয়ে ছিল ২-০ ব্যবধানে। 

এরপরই লেভারকুজেন ম্যাচে ফিরল। ৮৩ মিনিটে রোমা ডিফেন্ডার জানলুকা মানচিনির আত্মঘাতী গোল দুয়ার খুলে দিল স্বাগতিকদের। যোগ করা সময়ের সপ্তম মিনিটে জসিপ স্টানিসিচের গোলে ‘কামব্যাক’ সম্পন্ন করে। গড়া হয়ে যায় রেকর্ডও।

শেষ বাঁশি আসি আসি করছে, পরিস্থিতিটা যখন কথা বলছে বিপক্ষে, তখন গোল করে ম্যাচ বাঁচানোটা কঠিন কিছুই। সেই কঠিন কাজটাই যখন মৌসুমে অষ্টমবারের মতো করে বসে কোনো দল, তখন এটা তাদের জয়ের ‘সহজাত’ ধরন, বলে দেওয়াই যায়। তাতে লেভারকুজেনের ম্যাচে দ্বিতীয়ার্ধের ইনজুরি টাইমটাকে ‘জাবি টাইম’ না বলার কি কোনো উপায় থাকে? 

খেলার দুনিয়া | ফলো করুন :