ইতিহাসের দুয়ারে দাঁড়িয়ে আত্মবিশ্বাসী বসুন্ধরা
আবির্ভাবের পর থেকে বাংলাদেশ ফুটবলের দৃশ্যপটে বসুন্ধরা কিংস আছে তাদের নামের মতোই, ‘রাজার’ হালে। দেশের ফুটবলের সবচেয়ে বড় পরাশক্তি দলটা। বাকিদের অংশগ্রহণ যেন স্রেফ রানার্স আপের জন্যই। না, অত্যুক্তি নয় আদৌ। বিপিএলে টানা পাঁচ শিরোপা সাক্ষ্য দিচ্ছে এ কথার সপক্ষে।
তবে বাংলাদেশের ফুটবলে এত দাপট থাকার পরও একটা কীর্তি কখনোই ছুঁতে পারেনি কোচ অস্কার ব্রুজনের দল। জিগসও পাজলের শেষ টুকরোর মতো করে অধরাই থেকে গেছে ইতিহাসটা। কী সে ইতিহাস? ডমেস্টিক ট্রেবল, মানে ঘরোয়া তিন শিরোপার ত্রিমুকুট জয়ের ইতিহাস। পেশাদার যুগে বাংলাদেশ ফুটবলের ইতিহাসে এই কীর্তি স্রেফ শেখ রাসেলেরই আছে। ২০১২-১৩ মৌসুমে কোচ মারুফুল হকের অধীনে এই কীর্তি গড়েছিল দলটা। বসুন্ধরা সে ইতিহাসটা গড়তে পারেনি কখনও।
তবে সে সুযোগটা এবার চলে এসেছে সামনে। স্বাধীনতা কাপ জিতে ঘরোয়া মৌসুম শুরু বসুন্ধরার। এরপর লিগটাও তিন ম্যাচ হাতে রেখে জিতেছে দলটা। এবার ফেড কাপের ফাইনালে ইতিহাসের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন রবসন রবিনিও-তপু বর্মণরা।
এমন ইতিহাসকে নিজেদের প্রমাণ করার সুযোগ হিসেবে দেখছেন কোচ অস্কার ব্রুজন। স্পোর্টস বাংলাকে তিনি বলেন, ‘লম্বা একটা মৌসুম কঠোর পরিশ্রম, নিবেদন ও গোছানো অনুশীলনের পর আমরা এখানে এসে দাঁড়িয়েছি। কালকের ম্যাচটা আরও একটা সুযোগ আমাদের নিজেদেরকে প্রমাণ করার।’
বসুন্ধরার প্রতিপক্ষ এমন এক দল, যারা শেষ দুই মৌসুমে তাদের ভুগিয়েছে সবচেয়ে বেশি, মোহামেডান। চলতি মৌসুমে লিগ ম্যাচে বসুন্ধরা কিংসকে তাদেরই মাঠে হারিয়েছে দলটা। সে দলের মুখোমুখি হওয়ার আগে তাদের সম্পর্কে বসুন্ধরা কোচের মূল্যায়ন, ‘কাল আমাদের প্রতিপক্ষ যারা, তারা তাদের নিজস্ব খেলার দর্শনে ধারাবাহিক ছিল পুরো মৌসুমজুড়ে। রক্ষণটাকে জমাট রেখেছে, সেন্ট্রাল পজিশনগুলোতে সংখ্যাধিক্য বানিয়ে ডিফেন্ড করেছে, হাই উইংব্যাক ব্যবহার করেছে, বেশ গতিশীল আর ফিজিকাল খেলোয়াড় আক্রমণভাগে ব্যবহার করছে। তারা যখন ভার্টিকাল আর ডিরেক্ট ফুটবল দর্শন প্রয়োগ করেছে, আর সেট পিস থেকে গোল করাতে চোখ দিয়েছে, তখনই বেশ কার্যকরী দল হয়ে উঠেছে।’
মোহামেডানের এমন কৌশল যে কার্যকরি, তার প্রমাণ তারা বহুবার দিয়েছে। তবে মোহামেডানকে আরও একটু কঠিন প্রতিপক্ষ বানিয়ে দেয় তাদের হার না মানার মানসিকতা, যে কোনো পরিস্থিতি থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর মানসিকতা।
তবে এমন কিছুকে অস্কার নিজেদের বৈশিষ্ট্য বলেও দাবি করলেন। তার কথা, ‘কামব্যাক খেলারই অংশ। আর আমরাও এমন কিছু অনেক বার অনেক গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে করেছি।’ তবে কালকের ম্যাচ নিয়ে অস্কার বললেন, ‘আমাদের মনোযোগ হচ্ছে এসব চ্যালেঞ্জ খুঁজে বের করা, আর কালকের ম্যাচে এমন কিছুর বিরুদ্ধে অ্যাকশন নেওয়া।’
মাঠে পার্থক্য গড়ে দেবেন রবসন-মোরসালিন-রাকিবরা। তবে তাদের পেছনে অস্কাররা থাকবেন নিজেদের মতো করে। তাদেরকে, তাদের কৌশলকে গড়ে দেওয়াই যে কোচিং স্টাফের কাজ। অস্কারের ভাষ্য, ‘সব সময়ের মতো আমরা তো আছিই। আমরা আমাদের খেলোয়াড়দেরকে কালকের ম্যাচে পার্থক্য গড়ে দেওয়ার মতো পরিস্থিতিতে নিয়ে যাওয়ার কাজটা করব। খেলার পরিস্থিতি আর প্রতিপক্ষের খেলার ধরনকে মাথায় রেখে আমরা আমাদের কাজটা করব।’
তবে ফাইনালের আগে নিজ দলের প্রতি বিশ্বাসটা রাখছেন তিনি। তাদের আহ্বান জানাচ্ছেন, হৃদয় উজাড় করে খেলতে। অস্কার বললেন, ‘আমরা নিজেদের ওপর বিশ্বাসটা রাখছি। একে অপরের ওপর বিশ্বাসটা রাখছি, টেকনিক্যাল, ট্যাকটিকাল ক্ষমতার ওপরও। আমাদের সবকিছু আমরা ঢেলে দেব কালকের এই ফাইনালে। আমরা আমাদের খেলোয়াড়দের বলেছি হৃদয় উজাড় করে খেলতে। মনোযোগ, একাগ্রতা নিয়ে খেলতে। ক্লাব আমাদের ওপর বিশ্বাস রাখছে। তাদের আস্থার প্রতিদান দিতে ক্লাবের লক্ষ্য পূরণের খেলব আমরা।’