১০ বছরের পরিশ্রম এক নিমিষে শেষ!

১০ বছরের পরিশ্রম এক নিমিষে শেষ!

২০১৩ সালে অনূর্ধ্ব ১৪ দলে সুযোগ পান কৃষ্ণা রানি সরকার। পারফরম্যান্সে মুগ্ধতা ছড়িয়ে এক বছরের মাথায় জায়গা করে নেন জাতীয় দলে। পরে দেশের হয়ে ২০২২ সালে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের মুকুট পড়েন তিনি। তবে এরপর চোটে পড়েন। যেই চোট কাটিয়ে আর মাঠে ফিরতে পারেননি কৃষ্ণা। মাঝে চোট সারিয়ে আবার মাঠে ফেরার তাড়নায় ঘুরেছেন চিকিৎসকের কাছে। উন্নত চিকিৎসা করাতে বিদেশে যাওয়ার কথা বহুবার জানিয়েছেন বাফুফেকে। যদিও কাজ হয়নি কিছুই।

শেষটায় বাধ্য হয়ে চোট নিয়েই অনুশীলনে যোগ দিয়েছিলেন চীনা তাইপের বিপক্ষে ম্যাচ সামনে রেখে। যদিও চোটে জর্জরিত কৃষ্ণাকে না রেখেই দল ঘোষণা করে বাফুফে। যা নিয়ে আরও হতাশ হয়ে পড়েন কৃষ্ণা। সেই হতাশার কথায় কৃষ্ণা তুলে ধরেছেন তার ফেসবুক পোস্টে। কৃষ্ণা তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন...

২০২২ এ সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর ইঞ্জুরিতে পরি। প্রায়ই দেড় বছর হয়ে গেছে। পা আগে থেকে ভালো কিন্তু এখনো পুরোপুরি ঠিক হয়ে উঠতে পারিনি। প্র্যাকটিস করলেই ব্যথা হয়। বাফুফে ফিজিও দিয়ে আমার ট্রিটমেন্ট চলছে। সবাই জানে ইনজুরি টা অনেক রেয়ার। ব্যথা নিয়েই প্র্যাকটিস করতেছি। দেশে অনেক ডাক্তার দেখিয়েছে কিন্তু কোন কাজ হয়নি।

২০২৩ সালে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের ফিজিও দেবাশীষ চৌধুরী স্যারকে দেখিয়েছিলাম। উনি প্রায় আমাকে অনেকদিন দেখেন, যখন ব্যথা কমতে ছিল না। স্যার বলেছিলেন অস্ট্রেলিয়া, ইন্ডিয়া গিয়ে ট্রিটমেন্ট করাতে। কিন্তু যখন আমি বাফুফে জানাই, উনারা বলেন আরো কিছুদিন দেশে ডাক্তার দেখাতে। আমি অনেকদিন তাদেরকে ইন্ডিয়াতে যাওয়ার কথা বলছি। কিন্তু উনারা আমার কথায় কোন গুরুত্ব দেয়নি। আজও পর্যন্ত ব্যথা নিয়ে প্র্যাকটিস করছি।

২০১৩ সালে অনূর্ধ্ব ১৪ দলে সুযোগ পাই এবং ২০১৪ সালে সিনিয়র জাতীয় দলে সুযোগ পাই, সেখান থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত কখনো কোনো দলের বাইরে থাকে হয়নি। প্রায় ১০ বছর একটানা জাতীয় দলের হয়ে খেলেছি। টুকটাক ইনজুরিতে পড়েছি। কিন্তু হঠাৎ করে এত বড় ইনজুরিতে পড়বো কখনো ভাবিনি। অনেকদিন রেস্টে থাকার পর আর ভালো লাগছিল না এবং মানসিকভাবে ভেঙে পড়ছিলাম। তাই ব্যথা নিয়ে প্র্যাকটিস চালিয়ে যাচ্ছি। চায়নাতে যখন এশিয়ান গেম খেলতে যাই, তিনটা ম্যাচ ব্রাঞ্চে বসে কাটিয়েছে। ব্যাক টু ব্যাক দুইটা টুর্নামেন্ট থেকে বাদ পড়ে গেলাম। একজন প্লেয়ার হিসেবে এইটা মেনে নেওয়া খুব দুঃখজনক।

কষ্ট একটাই কখনো কোন টিমমেট, প্লেয়ার বা কোচ কে বলতে দেখলাম না কৃষ্ণা ইনজুরি তাকে তাড়াতাড়ি ট্রিটমেন্ট করানো হোক। কারো কোন মাথা ব্যথাই নেই। ১০ বছরের পরিশ্রম এক নিমিষে শেষ। অনেক প্লেয়ারকে দেখেছি এভাবে হারিয়ে যেতে। মনে হয় সেই দিনটা আর বেশি দিন নেই কৃষ্ণার জন্য। সবাই আমার জন্য আশীর্বাদ এবং দোয়া করবেন। যাতে মানসিকভাবে ভেঙে না পরি। আবার আগের মতো মাঠে ফিরতে পারি।

সম্পর্কিত খবর