ডর্টমুন্ডের স্বপ্ন ভেঙে রিয়াল আবারও ইউরোপসেরা
মঞ্চটা গড়াই ছিল। রিয়াল মাদ্রিদ থেকে টনি ক্রুস আর লুকা মদ্রিচ বিদায় নিচ্ছেন, ওদিকে বরুসিয়া ডর্টমুন্ড থেকে মার্কো রয়েসও বিদায় নেবেন বলেছিলেন। ফাইনালের মঞ্চটা এমনিতেই বিশেষ কিছু। ইউরোপসেরার সম্মান দিয়ে যদি কিংবদন্তিদের বিদায় দেওয়া যায়, তাহলে তার মাহাত্ম্যটা আরও বেড়েই যায়। রিয়াল আর ডর্টমুন্ড তাই স্বপ্ন দেখছিল তেমন কিছুর। সে স্বপ্নটা শেষমেশ ভাঙল ডর্টমুন্ডেরই। তাদের ২-০ গোলে হারিয়ে আবারও ইউরোপসেরা বনে গেছে রিয়াল মাদ্রিদ।
গতকাল লন্ডনের ওয়েম্বলিতে হাজির হয়েছিলেন সাবেক রিয়াল কোচ জোসে মরিনিও আর সাবেক ডর্টমুন্ড কোচ ইউর্গেন ক্লপ। দুজনের অধীনেও দুবার দুই দল মুখোমুখি হয়েছে। রিয়াল মাদ্রিদকে সেবার সেমিফাইনাল থেকে ছিটকে দিয়েছিল বরুসিয়া। দুই কোচের উপস্থিতিতে তারও বদলা নিয়ে ফেলল রিয়াল।
অথচ ডর্টমুন্ড যেভাবে শুরুটা করেছিল গত রাতে, তাতে মনে হচ্ছিল চ্যাম্পিয়ন্স লিগ যুগে রিয়ালের কখনো ফাইনালে না হারার রেকর্ডটা আজ ভাঙলেও ভেঙে যেতে পারে। ইউলিয়ান ব্রান্ট, কারিম আদেয়েমি, নিকলাস ফুলক্রুগদের সবাই একটা একটা করে সুযোগ নষ্ট করেছেন যা একটু এদিক ওদিক হলে নিদেনপক্ষে ৩-০ গোলের লিড পেয়েই যেতে পারত তারা।
রিয়াল মাদ্রিদের ডিএনএই এমন, বাজে সময় দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করে গিয়ে শেষে মরণকামড় বসানো। এমন দৃশ্য জীবনে বহুবার দেখেছেন আপনি। প্রথমার্ধে ওভাবে শেষ করার পর তাই সে অভিজ্ঞতা আপনাকে জানিয়ে দেওয়ার কথা ম্যাচে ব্যাকফুটে থাকলেও আদতে এখন ফেভারিট রিয়ালই।
এক গোল, দুই গোলে পিছিয়ে থেকেও বহু চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ম্যাচ বের করে ফেলেছে রিয়াল। কাল ওয়েম্বলিতে তো কোনো হজম করা ছাড়াই প্রথমার্ধ বিরতিতে গিয়েছিল দলটা। তখন ড্রেসিং রুমে পেপ টকে কী বলছিলেন কার্লো অ্যানচেলত্তি, তা কখনও ফাঁস হলে বেশ মজার এক বিষয়ই হবে বটে। সাক্ষাৎ যমদূতের চোখে যে ধুলো দিয়ে দলটা গেছে বেঁচে।
এরপরের গল্পটা আপনি জানেন। চলতি মৌসুমে রিয়াল মাদ্রিদের নায়কের অভাব নেই। নির্দিষ্ট কারো গোলের দিকে চেয়ে থাকছে না দলটা। নতুন দিনে নতুন কেউ বনে যাচ্ছেন রিয়াল মাদ্রিদের ত্রাতা। কাল গোলটা এল দানি কার্ভাহালের কাছ থেকে। কর্নার থেকে দারুণ এক হেডে বলটা নিয়ে আছড়ে ফেললেন বরুসিয়ার জালে। গোলবারের ঠিক পেছনে ডর্টমুন্ড সমর্থকদের ইয়েলো ওয়াল তখন স্তব্ধ। শেষ চার চ্যাম্পিয়ন্স লিগের নিষ্পত্তি ওই এক গোলেই হয়ে গিয়েছিল। সে ভাবনাটা মাথায় রেখেই হয়তো!
তবে রিয়াল সে এক গোলেই থামল না। ভিনিসিয়াস জুনিয়র চলতি মৌসুমে যেন আছেন ক্যারিয়ারসেরা ফর্মে। তবে তার আগেও ছিলেন। রিয়াল মাদ্রিদ যে দুই বছর আগে সবশেষ চ্যাম্পিয়ন্স লিগটা জিতেছিল, ফাইনালে গোলটা তো তিনিই করেছিলেন। আরও একবার ফাইনালে গোলটা পেয়ে গেলেন তিনি। ৮৩ মিনিটে জুড বেলিংহ্যামের পাস থেকে গোলরক্ষককে বোকা বানিয়ে বল জালে পাঠান তিনি।
ডর্টমুন্ড একবার বল জালে পাঠিয়েছে বটে। কিন্তু নিকলাস ফুলক্রুগের সে চেষ্টাটা গোলে রূপ পায়নি অফসাইডের দোষে। তারপর ৮৬ মিনিটে টনি ক্রুস মাঠ ছাড়েন পুরো মাঠের স্ট্যান্ডিং অভেশনকে সঙ্গী করে। সে আবেগী মুহূর্তটা শেষ হতেই ওয়েম্বলির সাদা রঙটা রূপ নেয় আনন্দের রঙে। রিয়াল মাদ্রিদের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ নিশ্চিত হয় ১৫তম বারের মতো। শেষ দশ বছরে এই নিয়ে ষষ্ঠ বারের মতো চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতে রিয়াল আবারও প্রমাণ করে দিল, চ্যাম্পিয়ন্স লিগের রাজা তারাই।