৩৭-এ পা দিলেন ফুটবল জাদুকর

  • স্পোর্টস বাংলা রিপোর্ট
  • ০২:৪৬ পিএম | ২৪ জুন, ২০২৪

প্রতিবছরই জুনের শেষ দিকটা লিওনেল মেসির ভক্ত ও সমর্থকদের কাছে বিশেষ কিছু। আজ ২৪ জুন, আজই সেই বিশেষ দিন! কারণ ২৪ জুন যে মেসির জন্মদিন!

নিজে খেলা, অন্যকে খেলানো; নিজের গোল, সতীর্থের গোল, সর্বত্রই মেসির মনোযোগ সমান, সেটা একেবারে ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই। মোহজাগানিয়া সব ড্রিবলে প্রতিপক্ষ রক্ষণ ছিঁড়েফুঁড়ে গিয়ে জালে বল জড়ানো যেমন তার দক্ষতা, তেমনি সমান দক্ষতা তার সতীর্থদের দিয়ে গোলটা করাতেও। এতটাই যে, নতুন ম্যারাডোনা হবেন কে- এ প্রশ্নের জবাবে কিংবদন্তি ডিয়েগো আরমান্দো ম্যারাডোনা নিজ মুখে বলে দিয়েছিলেন মেসির নাম!

২০০৬ বিশ্বকাপে সার্বিয়া-মন্টেনেগ্রোর বিপক্ষে ম্যাচে তার অভিষেকের দিনের কথাটা ভাবুন একবার। মেসি যখন মাঠে নামছেন বদলি হিসেবে, তখন ম্যারাডোনার দিকে ক্যামেরা চলে গিয়েছিল; ম্যারাডোনাকে এর মতো উন্মত্ত এর আগে-পরে কবে দেখা গেছে, তা বড় একটা গবেষণারই বিষয় বটে!

সে সার্বিয়া-মন্টেনেগ্রো ম্যাচ তো বটেই, এরপর আরও বহুবার বহু পারফরম্যান্সে মেসি বুঝিয়ে দিয়েছেন কেন খোদ ম্যারাডোনা তাকে নিজের উত্তরাধিকার দিয়েছেন। জিতেছেন চ্যাম্পিয়নস লিগ। প্রথম ব্যালন ডি’অর যখন হাতে নিচ্ছেন, তখন তার বয়স মোটে ২২ বছর! এরপর একবার নয়, দুইবার নয়, ব্যালন ডি’অর জিতলেন আটবার।

অভিষেকের আগে থেকেই ম্যারাডোনা মেসির ভক্ত। অভিষেকের পর নিজের মোহময় সব পারফরম্যান্স দিয়ে আরও কতশত রথী-মহারথীকে নিজের ভক্ত বানিয়েছেন মেসি, তার ইয়ত্তা নেই। কিংবদন্তি ইয়োহান ক্রুইফ তাদেরই একজন।

সর্বকালের অন্যতম সেরা এই ফুটবল ব্যক্তিত্ব তার ক্যারিয়ারের গোড়ার দিকেই বলে দিয়েছিলেন, ছেলেটা ক্যারিয়ার শেষ করবে কম করে হলেও সাতটা ব্যালন ডি’অর নিয়ে। মেসি পারফরম্যান্স দিয়ে ম্যারাডোনার কথা রেখেছেন, রেখেছেন ক্রুইফের কথাও। বরং তার চেয়ে একটা বেশিই আদায় করে নিয়েছেন।

তবে শুধু তাতে তো আর আর্জেন্টিনার মন ভরে না! শিরোপা চাই! দীর্ঘকাল যে দেশটিতে শিরোপা নিয়ে প্যারেডের উপলক্ষ এনে দেয়নি তাদের জাতীয় ফুটবল দল! ২০০৬ সাল থেকে সে ব্যর্থতার সঙ্গী ছিলেন মেসি নিজেও।

বার্সেলোনায় সুবর্ণ সময় কাটিয়ে এসে আর্জেন্টিনার জার্সিটা পরলেই যেন মেসির সব রঙ হারিয়ে যেত। মেসির সব রূপ যেন তোলা ছিল আটলান্টিকের ওপারের জন্যই, এপারের জন্য কিছু নয়! ক্যারিয়ার একটু বড় হতে সে অপবাদটা ঘোচালেন তিনি, আর্জেন্টিনার জার্সি গায়েও নিজের জাদু দেখালেন।

এক, দুই, তিন করে শিরোপা ধরা দিতে দিতেও দিল না টানা তিন বছর। এ যাত্রার নিউক্লিয়াস ছিলেন খোদ মেসি, সেই মেসির কুশপুতুল পোড়াতেও দ্বিধা করেনি বুয়েনস আয়ার্স, লা প্লাতা, করদোবার মানুষ। 

মেসির মনে তাই দুঃখ রয়েই যায়। শেষবার তো হাপুস নয়নে কেঁদেই ফেললেন জনসম্মুখে। এরপর অভিমানে বিদায়ও বলে দিলেন জাতীয় দলকে। এমন অসুখ আর কাহাতক সহ্য করা যায়? 

আর্জেন্টিনার হয়ে এইসব গঞ্জনা যখন সয়েছেন মেসি, তখন সময়টা কিন্তু ছিল এই জুন মাসই। সে ধারাটা অবশ্য কেটে গেছে বছর দুয়েক আগেই। ২০২১ সালেই যে চির আক্ষেপ ঘুচিয়ে চির অধরা আন্তর্জাতিক ট্রফিটায় চুমু এঁকেছিলেন। আর্জেন্টিনার হয়ে আরও একটা শিরোপা এই গত বছর জুনেই জিতেছেন, ইতালিকে হারিয়ে লা ফিনালিসিমা শিরোপা।

তবে এত কিছুর পরও একটা আক্ষেপ থেকেই গিয়েছিল তার। আট বছর আগে যে শিরোপাটা জেতা থেকে মেসি ছিলেন হাতছোঁয়া দূরত্বে, সে বিশ্বকাপটা গেল বছর নিয়ম বদলে তা চলে গেল নভেম্বর-ডিসেম্বরে। তার অপেক্ষাটা বাড়ল আরও একটু। অপেক্ষা বাড়লেও এবার নিয়তি তাকে নিরাশ করেনি। ৭ গোল, ৩ অ্যাসিস্ট করে তার নিয়তিটাকে যে তিনি গড়েছিলেন নিজেই! তার ফলেই তো বিশ্বকাপের শিরোপায় চুমুটা আঁকতে পারলেন, অবশেষে!

সেই এক শিরোপাই তাকে বদলে দিয়েছে খোলনলচে। না, মেসি বলতেই আমাদের চোখে যে শান্ত-সুবোধ বালকের চেহারা ভেসে ওঠে, সেখান থেকে মেসি রীতিমতো জন উইক গোছের কিছু হয়ে যাননি! আর্জেন্টাইন অধিনায়ক এখন একটু কম মাথা ঘামান আর সব কিছু নিয়ে; এতটাই যে, তাকে দুয়ো দিচ্ছে সমর্থকরা, সেখানে কানই নেই তার! এতটাই যে, ইউরোপ ছেড়েও চলে গেছেন দ্বিতীয়বার কোনো ভাবনা না দিয়েই। সবকিছু হয়েছে, কারণ সব কিছুই যে জেতা হয়ে গেছে এখন তার! আর কী বাকি আছে!

বর্তমানে কোপা আমেরিকা মিশনে পুরো দলের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে আছেন মেসি। নিজেদের প্রথম ম্যাচে কানাডাকে হারিয়েছে আর্জেন্টিনা। গ্রুপ পর্ব বেশ সহজেই টপকে যাবে আলবিসেলেস্তেরা এমনটাই আশা করেন সমর্থকরা। এমনকি নিজের বর্ণিল ক্যারিয়ারে আরেকটি শিরোপা যোগ করতেই চাইবেন মেসি। দ্বিতীয় কোপা আমেরিকা শিরোপার দিকেই আপাতত মনোযোগ আছে সর্বকালের সেরাদের মধ্যে অন্যতম এই ফুটবল জাদুকরের।

খেলার দুনিয়া | ফলো করুন :