শেষ মুহূর্তে লাওতারোর গোলে চিলিকে হারাল আর্জেন্টিনা
২০১৬ সালের ২৭ জুন ফিরল ২০২৪ সালের ২৬ জুনে। তবে নিউ জার্সির মেটলাইফ স্টেডিয়াম এবার আর ফিরল না সেই মেটলাইফ স্টেডিয়ামে। ২০১৬ সালে সেই দিনের দুঃস্মৃতির কথা হয়তো এখনো ভোলেনি আর্জেন্টাইন সমর্থকরা। সে বছর টানা দ্বিতীয়বারের মতো কোপার ফাইনালে উঠেছিল আলবিসেলেস্তেরা। ২০১৫ সালের পর সেবারও সেই চিলির কাছেই শিরোপা খুইয়েছিল মেসি-ডি মারিয়া। দুবারই মূল ম্যাচ গোলশূন্য ড্রয়ের পর আর্জেন্টিনা হেরেছিল টাইব্রেকারে যেয়ে। ২০১৪ বিশ্বকাপ ফাইনালে হারের পর কোপায় পরপর দুই বছরেই দুই আসরের ফাইনালে হারের হতাশা থেকেই অবসরের ঘোষণা জানিয়েছিলেন আর্জেন্টাইন মহাতারকা লিওনেল মেসি। তবে সেই অবসর ভেঙে মেসি ও আর্জেন্টিনা এখন পরিপূর্ণ। জিতেছে কোপাসহ বিশ্বকাপ শিরোপাও।
আট বছর পর সেই মেটলাইফ স্টেডিয়ামেই কোপার এবারের আসরে গ্রুপপর্বেই চিলির মুখোমুখি আর্জেন্টিনা। বিশ্ব ও মহাদেশীয় চ্যাম্পিয়নদের এবার আর রুখতে পারল না চিলিয়ানরা। অবশ্য ম্যাচটি যাচ্ছিল গোলশূন্য ড্রয়ের পথেই। তবে ম্যাচের একদম শেষ মুহূর্তে বদলি নামা লাওতারো মার্তিনেজের একমাত্র গোলে ১-০ ব্যবধানে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ল লিওনেল স্কালোনির দল।
কোপায় গ্রুপপর্বে টানা দ্বিতীয় জয়ে আসরের প্রথম দল হিসেবে কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছাল আর্জেন্টিনা। গ্রুপ ‘এ’-তে ৬ পয়েন্ট নিয়ে এখন শীর্ষেও আছে তারাই।
পুরো ম্যাচে আধিপত্য বজায় রাখলেও চিলি গোলপোস্টে ৪১ বছর বয়সী ‘বুড়ো’ ক্লদিও ব্রাভোর বাঁধা পেরোতে পারছিল না আর্জেন্টিনা। ৬২ শতাংশ বল দখলে রেখে মেসিরা মোট শট নিয়েছেন ২২টি, যার মধ্যে লক্ষ্যেই ৯টি। প্রথমার্ধে মেসির একটি দারুণ শট ফিরেছিল পোস্টে লেগে, এছাড়া বাকি শটগুলো রুখে দিয়েছিলেন ব্রাভো। কেবল ৮৮তম মিনিটে বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের সেই কাঙ্ক্ষিত শটটি ছাড়া। এবং লাওতারোর সেই শটেই ২০১৬ সালে সেই দুঃস্মৃতি কাটিয়ে চিলিকে হারিয়ে দিল আর্জেন্টিনা।
সম্প্রতি মাঠের খেলায় দারুণ সময় পার করছেন লাওতারো। সিরি আর এবারের মৌসুমে ইন্টার মিলানের হয়ে জিতেছেন লিগ শিরোপা। সেখানে মৌসুমের সর্বোচ্চ ২৪টি গোল করেন তিনি। এতে জেতেন লিগের বর্ষসেরা স্ট্রাইকারের খেতাবও। সেই ছন্দ ধরে রেখেই কোপায় এর আগের ম্যাচে কানাডার বিপক্ষে ম্যাচের ৮৮তম মিনিটেই গোল পেয়েছিলেন লাওতারো। এবার চিলির বিপক্ষেও ঠিক সময়ে গোল করে দলকে জেতালেন এই ২৬ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড।
মেটলাইফ স্টেডিয়ামে ম্যাচে প্রথমার্ধে যখন চিলি একটিও শট নিতে পারেনি ততক্ষণে আর্জেন্টিনা নিয়েছে ১৩টি শট। তবে একটি খুঁজে পায়নি জালের ঠিকানা। ম্যাচের ৩৭তম মিনিটেই এগিয়ে যেতে পারত বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। তবে মেসির দূরপাল্লার এক শট পোস্টে লেগে চলে যায় মাঠের বাইরে। পরে প্রথমার্ধ শেষ হয় গোলশূন্য ব্যবধানে।
দ্বিতীয়ার্ধেই শুরতেও দারুণ সম্ভাবনা তৈরি করেছিল আর্জেন্টিনা। ৫০তম মিনিটে ছোট ডি-বক্সের প্রান্তে মেসির পাস থেকে মলিনায় নেওয়া বুলেট গতির এক শট রুখে দেন ব্রাভো।
পুরো ম্যাচে রক্ষণে ছন্দহীন পারফর্ম করলেও ৭২ থেকে ৭৫ মিনিট যেন ছিল পুরোটাই চিলির দখলে। তবে সেখানে তিন মিনিটের মধ্যে দুটি দারুণ শট ঠেকিয়ে দেন আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্তিনেজ। এরই মধ্যে নিজেদের আক্রমণভাগকে আরও শক্ত করতে গনজালেজ ও আলভারেসকে তুলে ম্যাচের ৭৩তম মিনিটে ডি মারিয়া ও লাওতারোকে নামান স্কালোনি। শেষ পর্যন্ত সেই বদলি নামা লাওতারোই ভাঙলেন ‘ডেডলক’। ম্যাচের যোগ করা সময়ে ৯০+৫ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করার দারুণ এক সুযোগ পেয়েছিলেন লাওতারো। তবে ডি মারিয়া পাস থেকে ব্রাভোর সঙ্গে ওয়ান টু ওয়ান পজিশনের লড়াইয়ে সফল হতে পারেননি তিনি। তাতে অবশ্য খুব একটা ক্ষুব্ধ হননি সমর্থকরা। কেননা মিনিট ছয়েক আগেই জয়সূচক গোলটা এনে দিয়েছিলেন লাওতারোই।
কোপায় গ্রুপপর্বে আর্জেন্টিনার শেষ ম্যাচ পেরুর বিপক্ষে, আগামী ৩০জুন। বাংলাদেশ সময় সকাল ৬টায় শুরু হবে ম্যাচটি।