মেসিকে ছাড়াই হেসে খেলে বলিভিয়া-জয় আর্জেন্টিনার

মেসিকে ছাড়াই হেসে খেলে বলিভিয়া-জয় আর্জেন্টিনার

আর্জেন্টিনার নতুন প্রজন্মের খেলোয়াড়রা চাইলে টিপ্পনী কেটে বলতেই পারেন, ‘এই তোমাদের এস্তাদিও এর্নান্দো সাইলেস?’ আকাশি সাদারা যেভাবে খেলেছে বলিভিয়ার লা পাজে, তাতে কথাটা ওঠাটাও নিছক অমূলক কিছু নয়। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দাপট ধরে রেখে, স্কোরলাইনে তার প্রতিফলন রেখে ম্যাচটা শেষ করেছে ৩-০ গোলে। ম্যাচ জয়ের মাহাত্ম্য বাড়িয়ে দিচ্ছে আরও একটা বিষয়, চোটের কারণে যে এদিন লিওনেল মেসি ছিলেনই না স্কোয়াডে! তাকে ছাড়াও আর্জেন্টিনা জিতেছে হেসে খেলেই।
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১২০০০ ফুট ওপরে অবস্থান এস্তাদিও এর্নান্দো সাইলেসের। এ বিষয়টাই লাতিন আমেরিকার বাকি নয় দল থেকে আলাদা করে দেয় বলিভিয়াকে। অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার অক্সিজেন সিলিন্ডার মুখে ছবি ইনস্টাগ্রামে প্রকাশ করে বুঝিয়ে দিতে চাইছিলেন এ বিষয়টাই। এই একটা কারণেই বাইরে যেমনই খেলুক বলিভিয়া, ঘরের মাঠে এলেই হয়ে যায় রীতিমতো অপ্রতিরোধ্য। ঘরের মাঠের দর্শকের সমর্থনের বিষয়টা হয়ে যায় উপরি পাওনা!
এত কিছু তো আছেই। সঙ্গে যোগ করুন আগের রাতে আর্জেন্টিনার টিম হোটেলের সামনে বলিভিয়ানদের সমর্থকদের আতশবাজি ফোটানোকে। মানে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টাইনদের ‘যত্নআত্তি’ টা ভালোভাবেই করেছে বলিভিয়া।
আলবিসেলেস্তেরা তার জবাব দিয়েছে মাঠের খেলায়। শুরুর ৩০ মিনিটে অবশ্য আর্জেন্টিনা অগোছালো ছিল বেশ। তবে উচ্চতার সঙ্গে মানিয়ে নিল যখন, এরপরই সুযোগ এসেছে সময়ে সময়ে। গোছানো আক্রমণ দেখা গেল ম্যাচের বয়স যখন আধঘণ্টা পেরোলো, প্রথম গোলটা এল তখনই। ডান পাশ থেকে আক্রমণে ওঠা আনহেল দি মারিয়া সময় বুঝে নিচু ক্রস করেন বক্সের মাঝে। যা দুই ডিফেন্ডারের ফাঁক গলে খুঁজে পায় লেট রান নিয়ে বক্সে চলে আসা এনজো ফের্নান্দেজকে। পা ছুঁইয়ে তিনি বলটা জড়ান স্বাগতিকদের জালে। ২০২২ বিশ্বকাপে মেক্সিকো ম্যাচের পর আবারও ফের্নান্দেজ পান গোলের দেখা। আর্জেন্টিনাও এগিয়ে যায় ১-০ গোলে।
৩৯ মিনিটে আর্জেন্টিনার কাজটা আরও সহজ হয়ে যায় বলিভিয়া দশ জনের দলে পরিণত হয়ে পড়লে। ক্রিশ্চিয়ান রোমেরোকে ফাউল করে সরাসরি লাল কার্ড দেখে বসেন রবের্তো ফের্নান্দেজ। আর্জেন্টিনা ব্যবধানটা দ্বিগুণ করে এর একটু পরেই, প্রথম গোলের মতো এ গোলের যোগানও দিয়েছেন ওই দি মারিয়াই। বক্সের অনেক বাইরে ফ্রি কিক পায় আকাশি-সাদারা। দি মারিয়ার ফ্রি কিকে মাথা ছুঁইয়ে বল জালে পাঠান নিকলাস তালিয়াফিকো।
আর্জেন্টিনা তিন গোল নিয়েই বিরতিতে যেতে পারত। এনজোর বাড়ানো বলটা ঠিকঠাক আয়ত্বেই নিতে পারেননি আলভারেজ। তাতে দুই গোলে সন্তুষ্ট হয়েই বিরতিতে যেতে হয় আর্জেন্টিনাকে।
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে অনেক উঁচুতে খেলা, তা বোঝা গেল প্রথমার্ধ বাঁশি বাজার একটু আগে। আর্জেন্টাইন সবার কোমড়ে হাত, নুয়েও পড়েছিলেন অনেকে। তবে সে বাঁধা এড়ানোর জন্য যা করা দরকার, বিরতির আগেই সবটুকু করে রেখেছিলেন দি মারিয়ারা।
দ্বিতীয়ার্ধে তাই আকাশি সাদারা খেলেছে রয়ে সয়ে, গোল না হজম করলেই তো হলো! সে কাজটা তো আর্জেন্টিনা সেরেছেই, সঙ্গে দ্বিতীয়ার্ধে পেয়ে গেছে আরও এক গোলের দেখাও। আগুনে এক শটে ৮২ মিনিটে স্কোরশিটে নাম লেখান নিকলাস গনজালেজ। আর্জেন্টিনাও লা পাজ ছাড়ে ৩-০ ব্যবধানের এক জয় নিয়ে।
জয়ের মাহাত্ম্যটা আরও বাড়িয়ে দেয় এ মাঠে আকাশি-সাদাদের অতীত ইতিহাস। গেল বিশ্বকাপের বাছাইয়ে পিছিয়ে পড়েও আর্জেন্টিনা জিতেছিল ২-১ গোলে। তার আগের তিন বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে এক ড্রয়ের বিপরীতে হেরেছিল দুই ম্যাচে। ফলে এ মাঠে আর্জেন্টিনা জয় পায়নি ১৫ বছর ধরে। স্কালোনির হাত ধরে সে বাঁধা এড়ানোর পর এবার টানা দ্বিতীয় জয়ও তুলে নিল বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। তাও আবার মেসিকে ছাড়াই। বিশ্বের অন্যতম কঠিন এক পরিবেশে, দলের প্রাণভোমরাকে ছাড়াই এমন দাপুটে জয়, তাতে বাকিদের প্রতি একটা বার্তাও দেওয়া হয়ে গেল বৈকি!


সম্পর্কিত খবর