যে গর্ত খুড়েছিলাম সেই গর্তে নিজেরাই পড়ে গেলাম
নিউজিল্যান্ডের কাছে আমরা দুই দিক দিয়েই হেরে গেলাম। দুই ইনিংস মিলিয়ে আমরা যে রান করেছি সেটা নিউজিল্যান্ড অতিক্রম করায় আমাদের প্রথম পরাজয়। সেটার জন্য নিউজিল্যান্ডকে অভিনন্দন। তবে ওদের জন্য আমরা যে গর্ত খুড়েছিলাম সেই গর্তে নিজেরাই পড়ে গিয়ে আমাদের যে দ্বিতীয় পরাজয়টা হলো সেটি মানা কঠিন। যে যাই বলুক না কেন দ্বিতীয় পরাজয়টা হতাশার, মানহানিকর আর অসম্মানের।
টস জিতে আমরা এমন একটা উইকেট পেয়ে ধরেই নিয়েছিলাম এটা ‘piece of cake’ এবং ‘matter of time’। কিন্তু প্রতিপক্ষ যে পুরোটা সিরিজ জুড়ে একটু একটু করে ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল এবং এই শেষ এক ঘন্টার যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছিল সেটি আমরা আমলেই নেই নি। আমরা নিশ্চিত ছিলাম প্রশ্নপত্র আমাদের যেহেতু জানা আমরা এগিয়ে থাকবোই, আমাদের জয় ঠেকায় কে।
যারা মাথা উঁচু করে চলতে জানে, যাদের মধ্যে অহংকারবোধ আছে, আত্মসম্মানবোধ আছে, পরাজয়ে যারা রক্তাক্ত হয়, যারা হার মেনে নিতে পারে না, আন্তর্জাতিক মঞ্চ তাদের জন্য। ব্যাট বা বল হাতে প্রতি মুহুর্তই তাদের এই পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হয়। এবং এটাই বোধহয় আমাদের ব্যার্থতা যে আমরা নিজেরা যেমন সেই বেশিষ্ট গুলি অর্জন করতে পারি নি তেমনি ব্যার্থ হয়েছি নতুন প্রজন্মের কাছে তা পৌছে দিতে। আমরা যে কোন সমস্যা সমাধানের জন্য ‘সহজ পন্থা’ নামের একটা বই তুলে দিয়েছি তাদের হাতে। এটি শুধু জাতীয় দল বা কেবলমাত্র খেলোয়াড়দের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য, তা নয়।
‘ঘরের মাঠে আমরা জিতব এবং বাইরে গিয়ে লড়াই করব’ -এই আহমিকা ভরা ভাবনা থেকে আমাদের বোধহয় এখন সরে আসতে হবে। ঘরের মাঠে জয়ের কোন নিশ্চয়তা আগামীতে আর থাকবে না এবং এটি যে কোন দলের বিরদ্ধেই। অন্য সবাই আমাদের চেয়ে এগিয়ে যাচ্ছে এই সত্য টা আমরা যত দ্রুত অনুধাবন করব ততই আমাদের জন্য মঙ্গল। এটি মাথায় রেখেই এখন থেকে আমাদের স্ট্র্যাটেজি নির্ধারণ করতে হবে।
যারা এইসব নিয়ে চিন্তা ভাবনা করেন এবং ভবিষ্যতেও করবেন, ‘think tank’, তাদের বোধহয় নতুন করে ভাবার সময় এসেছে। পুরো ব্যাপারটাই ঢেলে সাজান দরকার এবং সেটি আমাদের প্রেক্ষাপটকে মাথায় রেখেই। নয়তো অদূর ভবিষ্যতে আমরা আর তাল মেলাতে পারবো না। সময় কিন্তু চলে যাচ্ছে!
নাজমুল আবেদিন ফাহিম: ক্রিকেট কোচ ও বিশ্লেষক