সৌম্যর রেকর্ডময় সেঞ্চুরি, তবুও সিরিজ হারল বাংলাদেশ

সৌম্যর রেকর্ডময় সেঞ্চুরি, তবুও সিরিজ হারল বাংলাদেশ

ভালো ব্যাটিং। কিন্তু মামুলি বোলিং! এই দুঃখ নিয়ে নিউজিল্যান্ডে দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচ হারল বাংলাদেশ ৭ উইকেটে। এবং সেই সঙ্গে সিরিজেও হার। ২৯১ রানের স্বাস্থ্যবান স্কোর গড়েও ম্যাচ বাঁচাতে পারলো না বাংলাদেশ। কারণ খেলাটা শুধু ব্যাটিংয়ের নয়, জিততে হলে ভালো বোলিংয়েরও যে বড্ড প্রয়োজন। বোলিংয়ে সেই আবশ্যিক চাহিদা পুরো করতে না পারার দুঃখ নিয়ে শেষ হলো নেলসনের ওয়ানডে।

সিরিজ হারা ম্যাচে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় স্বস্তি সৌম্য সরকারের ব্যাটে রান। বড় রান। ১৫১ বলে সৌম্য করলেন ১৬৯। গড়লেন বেশ কয়েকটি রেকর্ড। তবে ব্যাটিংয়ে সঙ্গী হিসেবে কাউকে যে তেমন পেলেন না এই বাঁহাতি। দলের ২৯১ রানের মধ্যে সৌম্যর একাই ১৬৯। দলের স্কোর থেকে অতিরিক্ত রান বিয়োগ দিলে এই যোগাড়ে বাকিদের অর্জন দাড়াচ্ছে ১১০! পুরো দশজনের সঞ্চয় ১১০। আর সৌম্য একাই ১৬৯! অনেকদিন পরে সৌম্য এখন বলতে পারবেন, ‘খেলে দিলাম একটা ম্যাচ!’

পেছনের তিন ইনিংসে ১, ০, ০ পরে সৌম্যের ব্যাটে এই রান বড় বেশি প্রয়োজন ছিল। কোথাও তেমন রান না করে এই সিরিজে তার জায়গা পাওয়াটা বেশ বিস্ময়ের তেরি করছিল। সিরিজের প্রথম ম্যাচে শূন্য রান এবং বোলিংয়ে খরুচে ও দুটো ক্যাচ মিস করে সমালোচনার তীরে বিদ্ধ হচ্ছিলেন সৌম্য। কিন্তু দ্বিতীয় ম্যাচেই ঝলমলো সেঞ্চুরি করে সৌম্য জানিয়ে দিলেন এবার তিনি টিকে থাকার জন্যই এসেছেন।

ওয়ানডেতে এক ইনিংসে দেড়শ পার করা বাংলাদেশের তৃতীয় ব্যাটসম্যান হলেন সৌম্য। তার আগে ওয়ানডেতে এই কৃতিত্ব ছিল কেবল লিটন দাস  ও তামিম ইকবালের। তামিম ইকবাল অবশ্য দু’বার এই কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। সৌম্যর ১৬৯ রান এখন ওয়ানডেতে এক ম্যাচে বাংলাদেশি কোনো ব্যাটসম্যানের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। ১৭৬ রান নিয়ে এই তালিকায় লিটন দাস শীর্ষে আছেন। তবে এদিন সৌম্য আরেকটি ব্যাটিং রেকর্ড শুধুমাত্র নিজের করে নিয়েছেন। কোনো এক ওয়ানডে ম্যাচে সবচেয়ে বেশি বাউন্ডারি হাঁকানোর রেকর্ডটা এখন তার। নেলসনের ম্যাচে ১৬৯ রানের পথে ২২ টি বাউন্ডারি ও ২ ছক্কা হাঁকিয়েছেন তিনি। আগের ২০ বাউন্ডারির রেকর্ডটি ছিল তামিম ইকবালের।

১৬৯ রানের এই সেঞ্চুরির পথে সৌম্য সরকার আরেকটি দারুণ রেকর্ড গড়েছেন। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ওয়ানডে ক্রিকেটে এক ম্যাচে সর্বোচ্চ রান করা ক্রিকেটার এখন তিনি। আগের এই রেকর্ডটা ছিল ১৬৩ রানের। সৌম্য কার রেকর্ডটা ভেঙ্গেছেন জানেন? শচীন টেন্ডুলকারের!

সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে টসে হেরে আগে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশের শুরুটা ভালো হয়নি। এনামুল, নাজমুল ও লিটন দাস সিঙ্গেল ডিজিটে ফিরে আসেন। পাওয়ার প্লেতে ৪৪ রানে নেই ৩ উইকেট। তাওহীদ হৃদয়ও এই ম্যাচে ব্যর্থ। ৮০ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ধুঁকছিল বাংলাদেশ। সৌম্য সরকার একপ্রান্ত আকঁড়ে খেলেন তার ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস। মুশফিকুর রহিম অন্যপ্রান্ত থেকে ৫৭ বলে ৪৫ রান করে তার সঙ্গী হন। মেহেদি হাসান মিরাজ ও তানজীম হাসান সাকিবও দুটো ছোটখাটো জুটি গড়েন সৌম্যের সঙ্গে। তবে রান তোলার কাজ যা করার তা একাই করেন সৌম্য। ওপেন করতে নেমে ইনিংসের শেষ ওভারে সৌম্য যখন ফিরলেন তখন নামের পাশে ঝলমল করছে ১৬৯ রানের ইনিংস।

জবাবি ইনিংসে নিউজিল্যান্ডের শুরুর ব্যাটসম্যানরাই ম্যাচ জেতার কাজ করে দিলেন। ওপেনিং জুটিতে নিউজিল্যান্ড তুলে ১১ ওভারে ৭৬ রান। রাচিন রবিন্দ্র ৩৩ বলে ৪৫ রানের কার্যকর ইনিংস খেলেন। তার ইনিংসটাই নিউজিল্যান্ডের ম্যাচ জেতার সুর ঠিক করে দেয়। আগের ম্যাচের তারকা ব্যাটসম্যান উইল ইয়াং এই ম্যাচেও সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগিয়ে তোলেন। ৯৪ বলে ৮৯ রানে এসে শেষ হয় তার ইনিংস। তবে ততক্ষনে নিউজিল্যান্ড জয়ের বন্দরের খুব কাছে। ওয়ান ডাউনে হেনরি নিকোলসও মাত্র ৫ রানের জন্য সেঞ্চুরি মিস করেন। তবে তাতে দলের বড় জয়ে কোনো সমস্যা হয়নি।

২২ বল হাতে রেখে ৭ উইকেটে নিউজিল্যান্ড এই ম্যাচ জিততে কখনোই কোনো সময় তেমন কোনো সমস্যায় পড়েনি। স্বাগতিকদের ব্যাটিংয়ের পুরোটা সময় জুড়েই মনে হয়েছে তারাই জিতছে এই ম্যাচ। এবং হলোও তাই।

সংক্ষিপ্ত স্কোর: বাংলাদেশ ২৯১/১০ (৪৯.৫ ওভারে, সৌম্য ১৬৯, এনামুল ২, শান্ত ৬, লিটন ৬, তাওহীদ হৃদয় ১২, মুশফিকুর ৪৫, মেহেদি মিরাজ ১৯, তানজিম সাকিব ১৩, রিশাদ ৬, শরিফুল ১, হাসান মাহমুদ ০, অতিরিক্ত ১২, ডাফি ৩/৫১, রুকি ৩/৪৭)। নিউজিল্যান্ড ২৯৬/৩ (৪৬.২ ওভারে, ইয়াং ৮৯, রবিন্দ্র ৪৫, নিকোলস ৯৫, ল্যাথাম ৩৪*, ব্লান্ডেল ২৪*, হাসান মাহমুদ ২/৫৭)। ফল: নিউজিল্যান্ড ৭ উইকেটে জয়ী। ম্যাচসেরা: সৌম্য সরকার

সম্পর্কিত খবর