আনন্দ-বেদনার মিশেলের এক বছর
ফিরে দেখা ২০২৩: বাংলাদেশ ক্রিকেট
আজ থেকে ঠিক এক বছর আগে সাকিব আল হাসান একটা ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। বলেছিলেন, ২০২৩ হবে বাংলাদেশ ক্রিকেটের সেরা বছর। তার থেকে এক বছর পর এসে হিসেব করে দেখুন? হিসেব কি মিলছে?
এক কথায় উত্তরটা হবে, ‘না’। কেন? সাকিব কথাটা বলেছিলেন যে বিশ্বকাপের কথা ভেবে, সেখানেই তো ডাহা ফেল বাংলাদেশ! কথাটা আমার নয়, খোদ সাকিবেরই। তার অধিনায়কত্বে দল গিয়েছিল বিশ্বকাপে। সেখানে ৯ ম্যাচ খেলে জিতেছে মোটে ২টিতে, তার মধ্যে আছে আবার নেদারল্যান্ডসের কাছে হারও। সে হারের পর বাংলাদেশ অধিনায়ক অসহায় আত্মসমর্পণ করে সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, ‘এটাই বাংলাদেশের সবচেয়ে বাজে বিশ্বকাপ।’
এই একটা আসরই যেন দেশের ক্রিকেটের বছরটার গায়ে ‘দারুণ’ না বলে ‘বাজে’ তকমা লাগিয়ে দিল। সে বিশ্বকাপটা একপাশে রাখলে বছরটা খারাপ তো কাটেনি দলের! বছরের শুরু আর শেষটা দেখুন। শুরুটা হলো ঘরের মাটিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৩-০ ব্যবধানে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতে। শেষে নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে তাদেরই মাটিতে ১-১ সিরিজ ড্র! সেটাও অবশ্য টি-টোয়েন্টিতেই।
গেল বছর যখন ওয়ানডে ফরম্যাটে উড়ছিল বাংলাদেশ, তখন একটা ঠাট্টা খুব করে চলছিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। সেটা হলো, ‘টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বছরে আমরা ওয়ানডে ভালো খেলি, ওয়ানডে বিশ্বকাপের বছরে টি-টোয়েন্টি’। এ বছর যেন কথাটা প্রমাণ করেছে বাংলাদেশ। বিশ্বকাপটা ছিল ওয়ানডে ফরম্যাটে, সে বছরই ওয়ানডেতে বাজে একটা বছর কাটিয়েছে বাংলাদেশ। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে দুটো সিরিজকে একপাশে রাখলে জিততে পারেনি একটি সিরিজেও। ৩২ ম্যাচের মধ্যে জিতেছে মাত্র ১১টিতে, হেরেছে ১৮ ম্যাচে, বাকি তিন ম্যাচে ফল আসেনি। এর মধ্যে আছে ঘরের মাঠে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ হারের যন্ত্রণাও। এর আগে পরে ইংল্যান্ড আর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও ঘরের মাঠে সিরিজ হেরেছে বাংলাদেশ।
টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে বছরটা সবচেয়ে ভালো কেটেছে দলের। ১৪ ম্যাচের ১০টিতে জিতেছেন সাকিবরা। ৩ ম্যাচে হার, এক ম্যাচে ফল আসেনি। বছর শুরুর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জয় আর শেষে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে সিরিজ ড্রয়ের কারণেই এই ফরম্যাটে বছরটাকে সবচেয়ে ‘ভালো’ বলা যাচ্ছে।
টেস্টেও সময়টা খারাপ কাটেনি। অবশ্য এই সময় টেস্ট খেলেছেই মাত্র ৪টা। তার মধ্যে ৩টিতেই জিতেছে বাংলাদেশ। একটা জয় আবার নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। শতকরা জয়ের হারের দিক থেকে বছরটা বেশ ভালো ছিল দলের। ৭৫ শতাংশ ম্যাচে জিতেছে বাংলাদেশ, নিজেদের ইতিহাসে টেস্টে এত ভালো সময় আর কখনোই কাটায়নি বাংলাদেশ।
এত কিছুর সঙ্গে যদি বিশ্বকাপেও ভালো কিছু করে ফেলতে পারত দল, তাহলে বছরটাকে সেরা না হলেও ‘অন্যতম সেরা’ বলাই যেত। বলা যাচ্ছে না ওই বিশ্বকাপের কারণে। সঙ্গে যদি যোগ করেন মাঠের বাইরের সমস্যাকেও, তাহলে তো বলার কথা ভাবাও যায় না!
বছরটা শুরু হয়েছিল বোর্ড সভাপতির একটা সাক্ষাৎকার দিয়ে। ক্রিকবাজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি সাকিব আর তামিম ইকবালের দ্বন্দ্বটাকে সামনে এনেছিলেন। দুজনের এই দ্বন্দ্ব নিয়ে এরপর চর্চা হয়েছে আরও। এরপর বিশ্বকাপের আগ মুহূর্তে তামিম ইকবাল অবসর নিয়েছেন, ফিরেও এসেছেন, ম্যাচ খেলেছেন, এরপর বিশ্বকাপ থেকে আবার নিজেকে সরিয়েও নিয়েছেন। সব মিলিয়ে বিশ্বকাপের বছরের শুরু থেকে বিশ্বকাপের আগ পর্যন্ত এমন সমস্যা যে ক্রিকেটের বৈশ্বিক আসরে দলের পারফর্ম্যান্সে প্রভাব ফেলেছে, তা আঁচ করে নেওয়া যায় সহজেই। বছরের একটা বড় সময় নেতিবাচক আলোচনায় থাকারও একটা বড় রসদ যুগিয়েছে যা। এত অর্জনের পরেও তাই বছরটাকে নেহায়েত ‘ভালো’ও বলা যাচ্ছে না মূলত এ কারণেই।