মৌসুম বাঁচাতে কেন চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপাই চাই ডর্টমুন্ডের?
জার্মান বুন্ডেসলিগায় ২০১০-১১ এবং ২০১১-১২ মৌসুমে টানা দুই শিরোপা জিতেছিল বুরুশিয়া ডর্টমুন্ড। এরপর থেকেই জার্মান সাম্রাজ্যে যেন বায়ার্ন মিউনিখের একচেটিয়া আধিপত্য। সবশেষ আসর জিতে টানা ১১তম শিরোপা জেতে টুর্নামেন্টের সবচেয়ে সফল দলটি।
তবে সেই বায়ার্নকেই এবার 'চোখে সর্ষে ফুল' দেখাল বেয়ার লেভারকুজেন। লিগের ২৩ ম্যাচে এখন পর্যন্ত অপরাজিত থেকে ৬১ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে আছে শাবি আলোন্সোর দল। সমান ম্যাচ খেলে বায়ার্ন পিছিয়ে আছে ৮ পয়েন্ট। এদিকে এক ম্যাচ কম খেলা ডর্টমুন্ড পিছিয়ে ২০ পয়েন্ট। এতে এবারও যে শিরোপা জয়ের স্বাদ নেওয়া হচ্ছেনা এদিন টেরজিকের দলের, তা অনেকটা নিশ্চিতই।
সবশেষ ১১ মৌসুম ধরে শিরোপা পুনরুদ্ধারের মিশনটা গত আসরে প্রায় পূর্ণ করে ফেলছিল ডর্টমুন্ড। সেখানেই যেন লিখেছে ক্লাবের সবশেষ এক যুগের সবচেয়ে বেদনার গল্প। সেই গল্পটা একটু মনে করা যাক।
২০২১-২২ মৌসুমে শিরোপা জেতে বায়ার্নের থেকে ডর্টমুন্ড ছিল ৯ পয়েন্ট পিছিয়ে। পরে মৌসুমে ২০২২ সালের নভেম্বরে বিশ্বকাপ বিরতির আগেও লিগ টেবিলে বায়ার্ন মিউনিখের চেয়ে ৯ পয়েন্টে পিছিয়ে ষষ্ঠ স্থানে ছিল তারা। সমীকরণটা সবাই তখনই মিলিয়ে ফেলেছিলেন, যা হয়ে যাচ্ছিল আগের ১০ আসরে। তবে বিশ্বকাপের পর যেন হাওয়া বয়ে যেতে থাকল মরুর উলটো দিকে।
গত বছরের মার্চে ইউলিয়ান নাগেলসমানকে বরখাস্ত করে বায়ার্ন দায়িত্ব দেয় টমাস টুখেলকে। এতে ছন্দ হারিয়ে তা ফিরে পেতে যখন মরিয়া বায়ার্ন, অন্যদিকে উড়তে থাকা ডর্টমুন্ড একে একে সবাইকে টপকে লিগের ৩৩তম ম্যাচে উঠে গেল শীর্ষে, বায়ার্নের থেকে এগিয়ে গেল ২ পয়েন্টে। এতে মৌসুমের শেষ ম্যাচে মাইন্সের বিপক্ষে জিতলেই চ্যাম্পিয়ন হতো ডর্টমুন্ড, ঘুচে যেত শিরোপা খরা।
তবে তা হয়ে উঠেনি শেষ পর্যন্ত। নিজেদের শেষ ম্যাচে ২-২ গোলের ড্রয়ে নিয়ে যখন মাঠ ছাড়ে ডর্টমুন্ড, সেখানে একই সময়ে শুরু হওয়া আরেক ম্যাচে কোলনকে ২-১ গোলে হারিয়ে দেয় বায়ার্ন। শীর্ষ দুই দলের পয়েন্ট দাঁড়ায় সমান ৭১, গোল ব্যবধানে এগিয়ে থাকায় শিরোপা সেই বায়ার্নের কোলেই, টানা ১১তম বার।
সেই বেদনার গল্প আপাতত এই আসরে হয়তো ভোলা হচ্ছেনা ডর্টমুন্ডের। সেই হতাশা থেকে তবে পরিত্রাণ কিসে? এই মৌসুমে সুযোগটা কেবলই চ্যাম্পিয়নস লিগে।
লিগের অবস্থা এলোমেলো হলেও চ্যাম্পিয়নস লিগে শুরুটা বেশ দাপুটের সঙ্গেই করেছে ডর্টমুন্ড। গ্রুপ অব ডেথ ‘এফ’-এ পিএসজি, এসি মিলানের মতো জায়ান্টদের ছাপিয়ে ৬ ম্যাচে ১১ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয় এদিন টেরজিকের দল। শেষ ষোলোর ড্রয়েও মিলেছে স্বস্তি। যেখানে শেষ আটের লড়াইয়ে ম্যাচ পড়ে পিএসভির বিপক্ষে।
সেখানেও কি ভর করল লিগ ব্যর্থতার রাশি? গতকাল (মঙ্গলবার) রাতে পিএসভির মাঠে প্রথম লেগের ম্যাচে শুরুতে এগিয়ে গিয়েও ১-১ ড্রয়ে মাঠ ছাড়ে ডর্টমুন্ড। তবে লেগের পরের ম্যাচ জার্মান জায়ান্টদের মাঠে। সেখানে ডাচ ক্লাবটিকে খুব একটা সুযোগ দিতে চাইবে না স্বাগতিকরা। এবং পরিস্থিতি যখন মৌসুমে একের পর এক ব্যর্থতার ঢাকার সুযোগ, সেখানে আগের চরাই-উতরাই ভুলে জয়ের প্রহরই গুনবে দলটি।
২০২৪ এর ফেব্রুয়ারিতে এসে লিগ শিরোপা যখন ধরাছোঁয়ার বাইরেই এবং প্রশ্ন যখন মৌসুম বাঁচানোর, সেখানে ইউরোপীয় ক্লাব ফুটবলের সর্বোচ্চ প্রতিযোগিতায় নিজেদের দ্বিতীয় শিরোপার আশা রাখাটাই যথার্থ।