সব ছাপিয়ে আলোচনায় মুশফিকের আউট!
ঢাকা টেস্টের দ্বিতীয় সেশনে আরো চার উইকেট হারালো বাংলাদেশ। মুশফিক রহিম, শাহাদাত হোসেন দীপু, নুরুল হাসান সোহান ও মেহেদী হাসান মিরাজ চারজনই প্রায় বিচিত্র কায়দায় আউট হলেন। তবে এই চার আউটের তালিকায় সবাইকে ছাপিয়ে গেলেন মুশফিক রহিম। যে কায়দায় এবং যে আউট হলেন মুশফিক এই টেস্টে তা নিয়ে সামনের সময় অনেকদিন আলোচনা চলবে। ব্যাটে খেলার পর হাত দিয়ে সেই বল ধরার মতো বোকামো করে বসলেন মুশফিক। এমন নয় যে সেই বলটা স্ট্যাম্পের দিকে যাচ্ছিল। বল তার ব্যাটে লাগার পর প্রথম স্লিপের দিকে যাচ্ছিল ধীর গতিতে। সেই বল ধরে ডান হাতের গ্লাভসে আটকে রাখার চেষ্টা করেন মুশফিক। পরিস্কার অবস্ট্রাকটিং দ্যা বল। আপিল উঠলো। সেই আপিল গেল থার্ড আম্পায়ারের কাছে। আম্পায়ার জানালেন মুশফিক আউট। মাথা নিচু করে মাঠ ছাড়ার সময় নিশ্চয়ই মুশফিক ভাবছিলেন- কি বোকামোই না করলাম!
আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে মুশফিক এই অবস্ট্রাক্টিং দ্য বল আউট হলেন। টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে এমন ঘটনা ঘটলো অস্টমবারের মতো। ৮৩ বল খেলে ৩৫ রান করার পর একজন ব্যাটার কেন এমন ভুল করবেন? ৮৮ টেস্টেও ১৬২ ইনিংস খেলা একজন ক্রিকেটারের কাছ থেকে এমন ভুল কি কেউ প্রত্যাশা করে? ২০০৫ সাল থেকে আর্ন্তজাতিক ক্রিকেট খেলা মুশফিক কি এই আউট সম্পর্কে জানতেন না? ওই সময়টায় মুশফিক আসলে কি করতে চেয়েছিলেন? এই ম্যাচের কমেন্টেটর গ্রান্ট এলিয়ট বিস্ময়সুরে বলছিলেন-‘মুশফিক কি ব্যাটিংয়ের ওই সময়টায় উইকেটকিপিং করতে শুরু করেছিলেন?’ কমেন্ট্রি বক্সে বসা মুশফিকের সতীর্থ তামিম ইকবাল ব্যাখাটা দিলেন এভাবে-‘ নেটে অনুশীলনের সময় ব্যাটাররা অনেক সময় শটস খেলার পর বল কুড়িয়ে নেট বোলারের দিকে বাড়িয়ে দেয়, মুশফিক সম্ভবত সেই অভ্যাসেই কাটা পড়লেন।’
তাহলে কি মুশফিক ভুলে গিয়েছিলেন তিনি টেস্ট ম্যাচে খেলছেন! এটা তো নেট সেশন নয়। এই আউটের রিপ্লে যতোবার দেখবেন মুশফিক ততোবারই নিজেকে দোষী ভাববেন। উইকেটে সেট হয়েও কেউ এমনভাবে নিজের উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসে?
উইকেট বিলিয়ে দেওয়ার এই তালিকায় খানিকবাদে মুশফিককে অনুসরণ করলেন শাহাদাত হোসেন দীপু। লেগস্ট্যাম্প ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়া বলে ব্যাট লাগিয়ে ক্যাচ তুলে ফিরলেন তিনি। ১০২ বল খেলার পর কোনো ব্যাটার এমন শটসও খেলে! ৩১ রানের এই ইনিংসটা দীপুর শেষ হলো সেই আক্ষেপ নিয়েই। লিটন দাস ছুটিতে থাকায় টেস্ট সিরিজে খেলছেন নুরুল হাসান সোহান। সিলেট টেস্টে ব্যাটিংয়ে তেমনকিছুই করতে পারেননি তিনি। ঢাকায় প্রথম ইনিংসে সুযোগ ছিল। কিন্তু সুযোগ পেয়েও সেটাকে কাজে না লাগাতে পারার আরেকটি উদাহরণ রেখে সোহান ফিরলেন ব্যর্থ হয়ে। গ্লেন ফিলিপ্সের বলে যে ‘নরম কায়দায়’ তিনি ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন তাতে ব্যাটিং কোচ তাকে ড্রেসিংরুমে টুলের ওপর দাড় করিয়ে রাখার শাস্তি এখন দিতেই পারেন!
চা বিরতির ঠিক আগেভাগে মেহেদি হাসান মিরাজও ব্যর্থদের তালিকায় নাম লিখিয়ে ফিরলেন। ১৪৯ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ চা বিরতিতে গেল। চায়ে অনেক চিনি দিলেও ম্যাচের এই পর্বটা বাংলাদেশ দলের জন্য তেতো বিস্বাদই লাগবে।
ঢাকা টেস্ট স্কোরকার্ড:
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস (প্রথমদিনে চা বিরতিতে): বাংলাদেশ ১৪৯/৮ (৫৮ ওভারে, জাকির হাসান ৮, মাহমুদুল ১৪, শান্ত ৯, মুমিনুল ৫, মুশফিক ৩৫, দিপু ৩১, মিরাজ ২০, স্যান্টার ৩/৫৪, এজাজ ২/৫৪, ফিলিপ্স ২/২১)