অধিনায়ক নিয়ে অপরিষ্কার চিন্তায় বিসিবি!

অধিনায়ক নিয়ে অপরিষ্কার চিন্তায় বিসিবি!

আগে শুনি নিজের অধিনায়কত্ব নিয়ে কি বলেছিলেন সাকিব আল হাসান। বিশ্বকাপে খেলতে যাওয়ার আগেরদিন এক টিভি সাক্ষাতকারে সাকিব জানিয়েছিলেন, এই বিশ্বকাপ শেষেই তিনি অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেবেন। অধিনায়ক হিসেবে এটাই তার শেষ টুর্নামেন্ট।
একদম পরিষ্কার কথা।

শুধু একটা বিষয় সেদিন স্পষ্ট হলো না সাকিব কি শুধু ওয়ানডের অধিনায়কত্বের কথা বলছেন, নাকি বাকি দুই ফরমেটেরও? তিনি তো ওয়ানডে, টেস্ট এবং টি- টোয়েন্টি তিন ফরমেটেই বাংলাদেশের অধিনায়ক। তবে অধিনায়কত্ব যে ছাড়ছেন সেটা স্পষ্ট করেছিলেন।

সেই সাকিব বিশ্বকাপ শেষে ইনজুরির জন্য পরের সিরিজ মিস করেছেন। তিনি এখন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যস্ত। এমপি পদে নির্বাচন করছেন সাকিব তার গ্রামের বাড়ি মাগুরা-১ থেকে। সেই ব্যস্ততার মধ্যে সাকিব এক সাক্ষাতকারে ক্রিকেটে ফেরার কথা জানিয়েছেন। হ্যাঁ, তিন ফরমেটের সবগুলোতেই। সাকিবের সেই ইচ্ছের পর বিসিবির সুর কিছুটা বদলে গেছে।

সাকিব ইনজুরিতে থাকায় অধিনায়কত্ব করেন নাজমুল হোসেন শান্ত। এবং তিন ফরমেটেই তিনি অধিনায়ক। টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে শুরুটাও হলোও তার বেশ। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে সিলেটে জয়ে শুরু। তারপর নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টিতে দারুণ খেলে বাংলাদেশ। শান্তর অধিনায়কত্বও এখানেও প্রশংসিত হলো।

লম্বা মেয়াদের অধিনায়কত্বের জন্য একজনকে খুঁজছিল বিসিবি। শান্তর মধ্যে সেই একজনকে পেল তারা। অধিনায়ক খোঁজার বিসিবির এই তালিকায় আরও দুজনের নাম ছিল, মেহেদি হাসান মিরাজ ও লিটন দাস। কিন্তু লিটন দাসের মধ্যে অধিনায়কত্বের ম্যাটেরিয়াল আছে কিনা সেই প্রশ্ন খোদ বিসিবির মধ্যেই। গেল বছর তামিমের অনুপস্থিতিতে লিটন দাস বেশ কয়েকটি ম্যাচে অধিনায়কত্ব করেছিলেন। সফলও হয়েছিলেন। তার নেতৃত্বেই গত বছর ওয়ানডে সিরিজে ভারতকে হারায় বাংলাদেশ। কিন্তু দলকে পরিচালনায় যেরকম চিন্তা-ভাবনা এবং নিজেকে আরো প্রগাঢ়ভাবে নিয়োজিত করার যে মনোভাব একজন অধিনায়কের থাকা প্রয়োজন, লিটনের মধ্যে সেই গুণাবলির অভাব দেখতে পায় বিসিবির পর্যবেক্ষক-মহল। আর তাই বিশ্বকাপে সহ-অধিনায়কের দায়িত্বও পাননি আগের সিরিজে অধিনায়ক থাকা লিটন দাস!

সম্ভাব্য অধিনায়কের গুডবুক থেকে মূলত তখনই লিটন দাসের নাম কাটা যায়। অ্যা ক্যাপ্টেন ইজ মোর দ্যান অ্যা টিমম্যান এই সংজ্ঞার সঙ্গে লিটন দাসকে মেলাতে পারেনি বিসিবি। লিটনের নাম কাটা যাওয়ার পর তালিকায় রইলেন মেহেদি হাসান মিরাজ ও নাজমুল হোসেন শান্ত। বিশ্বকাপে সহ-অধিনায়কত্ব এবং দুটি ম্যাচে অধিনায়কত্ব করার অভিজ্ঞতা নাজমুল হোসেন শান্তকে এক্ষেত্রে মেহেদি হাসান মিরাজের চেয়ে এগিয়ে রাখলো।

সিলেট টেস্টে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে জয় এবং নিউজিল্যান্ড সফরে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজে বাংলাদেশ দলের সাফল্য জানান দিল নাজমুল হোসেন শান্তকে অধিনায়ক করে সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছে বিসিবি। একজন অধিনায়ককে মাঠে তো বটেই, মাঠের বাইরেও পারঙ্গম হতে হয়। মিডিয়াকে যথাযথভাবে ফেইস করা থেকে শুরু করে দল পরিচালনা, সামনের সময়ের জন্য পরিকল্পনা করা, নিজের খেলোয়াড়দের রক্ষাকবচ হওয়া, সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে দলকে এগিয়ে নেওয়া এবং সর্বোপরি নিজে পারফর্ম করা; যাকে ক্রিকেটীয় ভাষায় বলে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া ২২ গজের ব্যাট-বলের বাইরে এমনসব দাবি সাফল্যের সঙ্গেই পুরণ কে অধিনায়ক শান্ত।

দীর্ঘমেয়াদে অধিনায়কত্ব তার হাতে দেওয়ার ঘোষণা বিসিবি দিতেই পারতো। কিন্তু যেই না সাকিব জানালেন তিনি নির্বাচনের পরে তিন ফরমেটেই খেলায় ফিরছেন, ব্যাস সঙ্গে সঙ্গে বিসিবির মত বদলে গেল! বিসিবির টিম অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান সাংবাদিকদের জানিয়ে দিলেন, সাকিব এখনও আমাদের অধিনায়ক। খেলায় ফিরলে সেই অধিনায়ক হিসেবে থাকবে। সাকিবের সঙ্গে আমরা কথা বলবো। তার সিদ্ধান্ত কী সেটা জানবো।

প্রশ্ন হলো বিশ্বকাপের আগে সাকিব অধিনায়কত্ব ছাড়ার কথা যখন বলেছিলেন তখন কি বিসিবি তাকে জিজ্ঞেস করেছিল? অথবা সাকিবও কি সেই সিদ্ধান্ত (অধিনায়কত্ব আর না করার) নেওয়ার আগে বিসিবির সঙ্গে কথা বলেছিলেন কী?

এই দুই প্রশ্নের উত্তর হলো একটাই- কেউ কারো সঙ্গে কথা বলেননি। সাকিবও না। বিসিবিও না। সাকিবকে অধিনায়কত্ব দিয়েছিল বিসিবি। তিনি সেই দায়িত্ব যদি ছাড়তেই চান তাহলে সেটা মিডিয়ায় বলার আগে তো বিসিবিকে আগে জানাবেন। সেটা কি তিনি করেছিলেন? অবশ্যই না। যে নাজমুল হোসেন শান্তর মধ্যে আগামীর অধিনায়ককে দেখছিল বিসিবি সেই তাকেই এখন বিসিবি স্রেফ স্টপগ্যাপ অধিনায়ক হিসেবে ভাবছে!

সাকিব তারকা ক্রিকেটার। তুমুল তারকা-খ্যাতি তার। বিসিবির সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাও সাকিবের সেই চোখ-ধাঁধানো তারকা-খ্যাতির উজ্জ্বলতার সামনে নতজানু, হাটুগাড়া একটি প্রতিষ্ঠানের ম্লান প্রতিচ্ছবি!

সম্পর্কিত খবর