শেষ দিন হারের অপেক্ষায় থাকল বাংলাদেশ

শেষ দিন হারের অপেক্ষায় থাকল বাংলাদেশ

টার্গেট ৫১১ রান।

বাংলাদেশ দল শেষ ইনিংসে ব্যাট করতে নামার সময় মাঠের স্কোরবোর্ডে লেখাটা ফুটে উঠলো। সেদিকে তাকিয়েই এই ম্যাচের সব সমস্যার সমাধানও যেন মিলে গেল! ম্যাচ রিপোর্টে লেখার মতো একটা দারুণ আকর্ষনীয় শব্দ যোগ হলো, বিশ্বরেকর্ড!

এই ম্যাচ জিততে হলে বাংলাদেশকে গড়তে হবে বিশ্বরেকর্ড! সেই রেকর্ড গড়ার অপেক্ষায় থাকা বাংলাদেশ এখন বড় হারের অপেক্ষায়। চতুর্থ দিনের খেলা শেষে বাংলাদেশ ইনিংস ৭ উইকেট হারিয়ে পৌছালো ২৬৮ রানে।

আরও পড়ুন: বাংলাদেশের সামনে দুই রেকর্ড

ম্যাচ জিততে এখনো বাংলাদেশের প্রয়োজন আরো ২৪৩ রান। বাকি তিন উইকেটে ম্যাচের পঞ্চম এবং শেষদিন বাংলাদেশ এই রান তুলে নিবে-এমন আত্মবিশ্বাস কি আছে বাংলাদেশের ড্রেসিরুমে?

দ্বিতীয় ইনিংসে মুমিনুল হক পাক্কা ৫০ রান করে ফিরেন। এই ইনিংসে এখন পর্যন্ত সেটাই বাংলাদেশের একমাত্র হাফসেঞ্চুরি। মেহেদি হাসান মিরাজও ওয়ানডে স্টাইলে ব্যাট চালিয়ে ৪৯ বলে অপরাজিত ৪৪ রান নিয়ে খেলছিলেন। তার সঙ্গী তাইজুল ইসলাম ব্যাট করছিলেন ১০ রানে। আজ পঞ্চম এবং শেষদিনে শেষ তিন উইকেটে বাংলাদেশের ডিফেন্স কতক্ষণ টিকে সেটাই দেখার বিষয়। এই ম্যাচ বাংলাদেশের হারের দুরুত্ব মাত্র তিনটি ‘গুড বল’!

সাম্প্রতিক সময়ে এই দু’দলের ক্রিকেট লড়াই মাঠের ক্রিকেট ছাপিয়ে আবেগ-উত্তেজনা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতার নতুন রূপ এনে দিয়েছিল। নাগিন ড্যান্স, নিদহাস ট্রফিতে শেষ ওভারে মাহমুদউল্লাহর সেই ছক্কা, সেই ম্যাচ জয়ের উত্তাপ তো আগে থেকেই ছিল। গেল বিশ্বকাপে সাকিবের সিদ্ধান্তে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসের টাইম আউটের তর্ক-বিতর্কের রেশ উত্তাপের আগুনকে আরো উস্কে দিয়েছে। সেই উত্তাপের ঝাঁঝালো রেষ দেখা গেল টি- টোয়েন্টি এবং ওয়ানডেতে। কিন্তু দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে বাংলাদেশ ব্যাটে-বলে পারফরমেন্সে পুরোপুরি গোবেচারা টাইপের ক্রিকেট খেললো। কোনো সময় ম্যাচ জেতার সম্ভাবনার দুয়ার খোলা তো দুরের কথা; ম্যাচ বাঁচানোর মতো পর্যায়েও যে পৌছাতে পারলো না। দুই টেস্টের চার ইনিংসে মাত্র একবার বাংলাদেশ দুশোর ওপর রান তুলতে সমর্থ হলো। ব্যাটাররা পুরো সিরিজ জুড়ে যা করলেন তা হলো ব্যর্থতা আর ব্যর্থতা।

আরও পড়ুন: এখানে টিকে থাকলেই ঝুঁকি বেশি!

টানা চার ইনিংসে এমন ব্যাটিং ভরাডুবির পর অনেক পুরানো সেই প্রশ্নটা ফের উঠছে-স্কিলে ঘাটতি নিয়েই টেস্ট খেলছে বাংলাদেশ! আর এই অভিযোগ তো খোদ দলের ক্রিকেটাররাই স্বীকার করে নিচ্ছেন। সিলেটে ৩২৮ রানে হারের পর মেহেদি হাসান মিরাজ বলেছেন-‘আমাদের স্কিলেও সমস্যা রয়েছে।’

টেস্ট ক্রিকেট হলো স্কিল প্রর্দশনের মঞ্চ। এখানে এসে কেউ স্কিল ঠিক করে না। ঠিক করে তবেই এখানে হাজির হয়। বাংলাদেশের সবকিছুতেই উল্টোচলাটা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। দেশের টেস্ট ক্রিকেটও এখন সেই ব্রাকেটবন্দি হয়ে পড়ছে!

টেস্ট ব্যাটিংয়ের অন্যতম শর্ত হলো আগে ম্যাচ নিরাপদ করো, তারপর জয়ের দিকে ছুটে চলা। ৫১১ রান তাড়া করে কেউ কখনো আগে টেস্ট ম্যাচ জিতেনি। সেটা জানা কথা। কিন্তু এতো বেশি রানের পিছু নেমে তো ম্যাচ বাঁচানোর দৃষ্টান্ত রয়েছে অনেক। বাংলাদেশ সেটাই কেন বেছে নিলো না? পাঁচ সেশন ব্যাট করার চেষ্টা বা পরিকল্পনায় নিলেই তো পাঁচশ রানের কাছাকাছিও পৌছাতে পারতো বাংলাদেশ?

আরও পড়ুন: প্রথম দিনেই ম্যাচ নিরাপদ করে ফেলল শ্রীলঙ্কা

আটজন জেনুইন ব্যাটার নিয়ে এই টেস্ট ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। খুব বেশি না দুজন ব্যাটার যদি তিনশ করে বল খেলতেন তাহলেই তো অনেকদুর চলে যেত দল। কিন্তু শেষ ইনিংসে এখন পর্যন্ত একজন ব্যাটার খেলেছেন সর্বোচ্চ ৭২ বল। আউট হওয়া প্রায় সব ব্যাটার উইকেটে সেট হয়ে ফিরে এসেছেন। বড় দৈর্ঘ্যরে ম্যাচে যা প্রায় অপরাধের পর্যায়ে পড়ে।

চতুর্থদিনের উইকেটেও দারুণ ব্যাটিং সুবিধা ছিল। বাংলাদেশের ব্যাটাররা যে সেই সুবিধা লুটিয়ে দিয়ে এলেন। অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত ও উইকেটকিপার ব্যাটার লিটন দাস যে কায়দায় শেষ ইনিংসে আউট হলেন তাতে স্কোরকার্ডে তাদের আউটের পাশে ব্র্যাকেটে লিখে দেওয়া উচিত-‘ভয়ে আউট!’

চতুর্থদিন সকালে বাংলাদেশকে অনেক লম্বা সময় অপেক্ষায় রেখে ইনিংস ঘোষণা করে শ্রীলঙ্কা। তৃতীয়দিনের শেষ বিকেল থেকেই অপেক্ষার প্রহর শুরু হয়েছিল, শ্রীলঙ্কা কখন দান ছাড়বে। বাংলাদেশকে শেষ ইনিংসে কতো রানের টার্গেট দেবো। সেই সিদ্ধান্ত জানালো শ্রীলঙ্কা চতুথদিনের সকালের দেড় ঘন্টা ব্যাটিংয়ে পরে। দ্বিতীয় ইনিংসে ৭ উইকেটে ১৫৭ রান তুলে ডিক্লেয়ার্ড করলো তারা। ম্যাচ জিততে হলে বাংলাদেশকে রেকর্ড ৫১১ রান তুলতে হবে।

পেছনের তিন ইনিংসে ১৮০, ১৮৮ ও ১৭৮ রান তোলা বাংলাদেশের জন্য সিরিজের শেষ ইনিংসে ৫১১ রানের এই টার্গেট স্রেফ ঠাট্টা ছড়াচ্ছে! পুরো সিরিজ জুড়ে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের জন্য একটা শব্দই সম্ভবত যুতসই- হাস্যকর!

সংক্ষিপ্ত স্কোর (চতুর্থদিন শেষে) :

শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস: ৫৩১/১০ (১৫৯ ওভারে, মাদুশকা ৫৭, করুনারত্নে ৮৬, কুশাল মেন্ডিজ ৯৩, ম্যাথুস ২৩, চান্দিমাল ৫৯, ধনাঞ্জয়া ৭০, কামিন্দু মেন্ডিস ৯২*, হাসান মাহমুদ ২/৯২, সাকিব ৩/১১০, মিরাজ ১/১৪৬)। বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ১৭৮। শ্রীলঙ্কা দ্বিতীয় ইনিংস ১৫৭/৭ ডিক্লেয়ার্ড। বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস: ২৬৮/৭।

সম্পর্কিত খবর