তাসকিনের ঘুম ভাঙ্গিয়ে এখন বাকি সবাই ঘুমে!

তাসকিনের ঘুম ভাঙ্গিয়ে এখন বাকি সবাই ঘুমে!

বিশ্বকাপ শেষ হয়েছে। চ্যাম্পিয়ন ভারত দু’বছর পরের দল কেমন হবে তা নিয়ে পরিকল্পনা করতে শুরু করেছে। বিশ্বকাপ জিতিয়ে টি-টোয়েন্টিকে গুডবাই বলেছেন অধিনায়ক রোহিত শর্মা এবং ব্যাটসম্যান বিরাট কোহলি। এই ফরম্যাটে তাদের রিপ্লেসমেন্ট কারা হবে চলছে সেই খোঁজ। নতুন অধিনায়ক নিয়ে চলছে আলোচনা। অন্যদিকে দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথমবারের মতো ফাইনালে উঠেও কেন পারলো না- সেই বিশ্লেষণের চুলচেরা পর্যালোচনা করে সামনের আসরের জন্য আরো জোরদার পদক্ষেপ নিচ্ছে।
-আর আমরা, বিসিবি-বাংলাদেশ?

তাসকিন আহমেদের ঘুম-কাণ্ড ও বাস মিসের ঘটনা নিয়ে রকের আড্ডায় ব্যস্ত। ঘটনাটা গত ২২ জুনের সকালের। কিন্তু এখন পর্যন্ত বিসিবির কাছে পুরো ঘটনার পরিষ্কার কোনো ব্যাখ্যা নেই। নেই কোনো রিপোর্ট। বিসিবির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পরিচালক মিডিয়ার কাছে সোর্স হিসেবে তাসকিনের ঘুম-কাণ্ডের বর্ণনা করে দায়িত্ব সারলেন। ২ জুলাই বোর্ড সভা শেষে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হোসেন পাপনও এই প্রসঙ্গে যা বললেন তাতে স্পষ্ট পুরো বিষয়টা সম্পর্কে তিনিও পরিষ্কার নন।

-আমি রাবিদকে (বিশ্বকাপে দলের ম্যানেজার) ফোন করেছিলাম, ভারত ম্যাচে তাসকিনকে একাদশে না দেখে। কি রাবিদ করেছিলাম না? রাবিদ আমাকে জানাল, তাসকিন টিম বাস মিস করেছে। তবে ও এখন মাঠে। আমি পুরো বিষয়টার আর খোঁজ নেইনি। অধিনায়কের সঙ্গে কথা বলে হয়তো নিতে পারতাম বা তাসকিনের সঙ্গেও কথা বলতে পারতাম। কিন্তু এই কাজে যারা সংশ্লিষ্ট আমি তাদের রিপোর্টের অপেক্ষায়। দেখি রিপোর্টে কি আছে।

২ জুলাই বোর্ড সভা শেষে তাসকিনের ঘুম-কাণ্ডের পরিস্থিতি এভাবেই ব্যাখ্যা করেন সভাপতি। তবে পুরো সংবাদ সম্মেলনে বিসিবি সভাপতির উচ্ছ্বাস, অনুযোগ, অভিযোগ এবং অতৃপ্তির যোগ-বিয়োগ ফল জানাচ্ছে বিশ্বকাপে দলের তিন ম্যাচে জয়ে তিনি সন্তুষ্ট। সুপার এইটে দলের নাম লেখানো নিয়ে তৃপ্ত। রিশাদ, হৃদয়, তানজিম সাকিবের মতো ‘বাচ্চা বাচ্চা’(!!) ক্রিকেটার প্রথমবার বিশ্বকাপে খেলতে গিয়ে যা অর্জন করেছে তাতেই সাফল্যের ঝুলি উপচে পড়ছে। বোর্ড সভাপতির সঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত বিসিবির বাকি পরিচালকদের মুখের হাসি এবং মাথা ঝাঁকানো দেখে মনে হচ্ছিল তারা সবাই কোরাস গাইছেন-‘আমরা জয়যুক্ত হয়েছি! আমরা জয়যুক্ত হয়েছি!! আমরা জয়যুক্ত হয়েছি!!!’

বিশ্বকাপে বাংলাদেশ সাত ম্যাচ খেলেছে। তিনটিতে জিতেছে। চারটি হেরেছে। কাকে হারিয়েছে নামগুলো শুনি-শ্রীলঙ্কা, নেদারল্যান্ডস ও নেপাল। হেরেছি দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও আফগানিস্তানের কাছে।
-কি বুঝলেন?

জয় তিনটি। হার চারটি। সহজ হিসেবের এই বিয়োগফল জানাচ্ছে মাইনাসে দাড়িয়ে বিশ্বকাপ শেষ করেছে বাংলাদেশ। এতো গেল অংকের হিসেব। সুপার এইটের তিন ম্যাচে বাংলাদেশের খেলা দেখে প্রায় সবাই এককভাবে রায় দেন, এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশ খেলতে এসেছে, জিততে নয়। ভারত, অস্ট্রেলিয়া এবং আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ম্যাচে বাংলাদেশের খেলার ধরণ, জেতার তাগিদে নেতিয়ে পড়া মনোভাব এবং আগেভাগেই পারবো না বাবা বলে পিছু হটা ন্যুব্জ ক্রিকেট দিয়ে আর যাই হোক- বিশ্বকাপে ম্যাচ জেতা যায় না।

এই বিশ্বকাপকে কেউ ফর্মে ফেরার জন্য ম্যাচকে ব্যবহার করলেন। ম্যাচ পরিস্থিতি বিবেচনা না এনে শুধু নিজের নামের পাশে কিছু রানের লোভে ব্যাট করে গেলেন প্রচুর বল ডট হিসেবে গিলে! অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচে লিটন দাস কেন ২৫ বলে ১৬ রান করবেন? এই প্রশ্ন করতে বিসিবিকে এতদিন অপেক্ষা কেন করতে হবে?

আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ম্যাচে অধিনায়ক যে তিন উইকেট তত্বের ফূর্মলা দিলেন, তার ব্যাখ্যা কি চাওয়া হয়েছে? ৭৩ বলে ১১৬ রান তোলার টার্গেটে কেন দল শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করলো না? কেন শুধুমাত্র একটা যেনতেন উপায়ে সেই ম্যাচ জেতার চেষ্টায় নেমেছিল দল? ওভাবে ম্যাচ জিতে শুধু একটা সংখ্যা বাড়িয়ে কি কার এবং কিসের লাভ হতো? যে প্রক্রিয়ার জয় আপনাকে সত্যিকার অর্থেই ‘জেতায়’ না, সেখানে শক্তি খরচ কেন? সেই প্রশ্নের উত্তর কি কোচের কাছে খোঁজা হয়েছে। বিশ্বকাপ শেষে ছুটিতে যাওয়ার আগেই তো কোচ, অধিনায়ক এবং টিম ম্যানেজমেন্টের কাছে এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা চাওয়া উচিত ছিল?

আফগান ম্যাচে পুরো দলের চিন্তায়, পরিকল্পনায়, মেজাজ ও কৌশলে যা ফুটে উঠেছে তা হলো দৈন্যতা। আরো সহজ ভাষায় বললে এটা স্রেফ অযোগ্যতা!

ভারত ম্যাচের আগে তাসকিনের ঘুম-কাণ্ড ও বাস মিসের ঘটনা অবশ্যই বড় শৃঙ্খলা ভঙ্গ। যদিও তাসকিন দাবি করছেন বাস মিসের সঙ্গে সেই ম্যাচে তার বাদ পড়ার বিষয়টি সম্পর্কিত নয়। সেই ম্যাচে তাকে কম্বিনেশনের দোহাই দিয়ে রাখা হয়নি। তাসকিনের সেই দাবিও গ্রহণযোগ্য মনে হচ্ছে, কারণ সেই ম্যাচে তাসকিনের জায়গায় তো দল কোনো পেসারকে খেলায়নি। খেলিয়েছে ব্যাটার জাকের আলী অনিককে। তবুও ঘুমের জন্য বিশ্বকাপের মতো আসরে খেলতে গিয়ে টিম বাস মিস করাটা অবশ্যই বড় ধরনের শৃঙ্খলা ভঙ্গ। যদিও তাসকিনের সেই শৃঙ্খলা ভঙ্গ বাংলাদেশের ম্যাচ হারের কোনো কারণ হয়নি। কিন্তু আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ম্যাচে দল যে ভুল পরিকল্পনা নিয়ে খেলেছিল সেটাই বাংলাদেশকে ম্যাচ হারিয়েছে। সেমিফাইনালে খেলার স্বপ্নকে ‘খুন’ করেছে।

তাসকিনের টিম বাস মিসের চেয়ে বড় অযোগ্যতা যে ওটাই। আর সেই অযোগ্যতা যারা দেখিয়েছেন তাদের আড়াল করতেই যেন এখন ‘তাসকিন তামাশার’ ডুগডুগি বাজানো হচ্ছে!

কি বুঝলেন? এতক্ষণে তাসকিনের ঘুম ভাঙিয়ে বাকি সবাই যে ঘুমে!

সম্পর্কিত খবর