স্পিন বিষে নীল ঢাকা টেস্টের রেকর্ডময় প্রথম দিন

স্পিন বিষে নীল ঢাকা টেস্টের রেকর্ডময় প্রথম দিন

বাংলাদেশের ১৭২ রানের জবাবে দিনশেষে নিউজিল্যান্ড ৫৫ রানে ৫ উইকেট।

গোটা দিনে দু’দলের ব্যাটাররা মিলে করলেন ২২৭ রান। সারাদিনে উইকেট পড়লো ১৫টি। প্রথমদিন শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ থেকে এখনো ১১৭ রানে পিছিয়ে নিউজিল্যান্ড। কোনো হাফসেঞ্চুরি নেই। যা আছে তার পুরোটাই কেবল স্পিনারদের দাপট। পতন হওয়া ১৫ উইকেটের মধ্যে ১৪টিই স্পিনারদের দখলে। স্কোরবোর্ডের হিসেব নিকেষ জানাচ্ছে ১৭২ রানের মামুলি সংগ্রহ নিয়েও বাংলাদেশ ঢাকা টেস্টের প্রথমদিন ফিরলো ‘বিজয়ী’র বেশেই! এই টেস্টে লিডের স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ এখন বেশ আয়েশেই।

একদিনে সবমিলিয়ে ২২৭ রানের জবাবে ১৫ উইকেটের পতন। টেস্টের প্রথমদিন উইকেট পতনের হিসেবে এটি নতুন রেকর্ড। এর আগে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে শের-ই-বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টেস্ট ম্যাচের প্রথমদিনে সর্বোচ্চ ১৪ উইকেটের পতন হয়েছিল। সেই টেস্টে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ছিল শ্রীলঙ্কা।

ঢাকা টেস্টের গোটা দিনই স্পিনারই দাপট দেখান। আর দিনের শেষ সেশনে তো স্পিন বিষে ব্যাটাররা নীল! শেষের এই লড়াইয়ে বাংলাদেশের স্পিনাররা দিনের ব্যাটিং ব্যর্থতাকে কিছুটা মুছিয়ে দিতে পারছে। মেহেদি মিরাজ ও তাইজুল ইসলাম বল হাতে যে জাদু দেখাচ্ছেন তাতে নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিং লাইনআপ যে ভীষন অসহায়! মেহেদি মিরাজ দিনের শেষবেলায় ঝটপট ৩ উইকেট তুলে নেন। যার মধ্যে একওভারেই আছে আবার ২ উইকেট। একপ্রান্তে তাইজুল অন্যপ্রান্তে মিরাজ-এই দুইয়ের স্পিন আক্রমণের ধার সামাল দিতেই পারলো না প্রথমদিন নিউজিল্যান্ড। হয়ে গেল ভাঙ্গাচোরা চেহারা; ৫৫ রানে নেই ৫ উইকেট।

মিরপুরের উইকেট কি নিয়ে অপেক্ষা করছে সেটা খুব ভালোই জানা ছিল দু’দলের। স্পিন সহায়ক এই উইকেটে বাংলাদেশের ব্যাটিংও যে খুব আনন্দদায়ক কিছু হয়েছে সেটা বলার উপায় নেই। দলের বেশ কয়েকজন ব্যাটার যে কায়দায় আউট হয়েছেন তা নিয়ে ব্যাটিং কোচের চিন্তা বাড়তেই পারে।
কয়েকটি আউটের বর্ণনায় যাই।

জাকির হাসান। ডাউন দ্য উইকেটে এসে ছক্কা মারতে গিয়ে আউট। মুশফিকুর রহিম। ব্যাটে খেলার পর হাত দিয়ে বল ধরে অবস্ট্রাকটিং দ্য বল আউট। নাজমুল হোসেন শান্ত। রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে এলবিডব্লু। তাও আবার ইনিংসের গোড়ার দিকে। শাহাদাত হোসেন দীপু। লেগস্ট্যাম্পের অনেক বাইরে প্রায় ওয়াইড হতে যাওয়া বলে ব্যাট লাগিয়ে ক্যাচ তুলে দিলেন। নুরুল হাসান সোহান। জায়গায় দাড়িয়ে গ্লেন ফিলিপ্সের স্পিনে আসলে কি করতে চাইলেন তিনি বোঝা গেল না। শুধু দেখা গেল সহজ ক্যাচ। তাইজুল ইসলাম। সোজা আসা বলে ব্যাট দিয়ে না খেলে প্যাড বাড়িয়ে দিলেন। প্যাডআপ করলেন। এলবিডব্লুর সহজ সিদ্ধান্ত। আউট।

১৭২ রানে গুটিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসের বেশিরভাগ আউটই এমন ফ্রিক এবং সহজতর। দেখে মনে হলো নিউজিল্যান্ড বোলারদের এসব উইকেট পেতে তেমন কোনো কষ্ট করতে হয়নি। বরং বাংলাদেশের ব্যাটাররা তাদের উইকেট উপহার দিয়ে এসেছেন।

ব্যাট দিয়ে খেলার পর কেউ হাত দিয়ে বল আটকাচ্ছেন। কেউ ব্যাট কাঁধের ওপর তুলে রেখে প্যাড দিয়ে খেলছেন। আউট হওয়ার জন্য সম্ভাব্য প্রায় সবরকম কায়দা করেছেন বাংলাদেশের ব্যাটাররা ঢাকা টেস্টের প্রথম ইনিংসে। মানছি উইকেট স্পিন বান্ধব। সেটা তো জানা কথা। কিন্তু তাই বলে উইকেট ছুঁড়ে দিয়ে আসতে হবে কেন? প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের এই ব্যাটিং দেখে নিশ্চয়ই এখন কোচ চন্ডিকা হাতুড়েসিংহে দলের কাছে এই জবাবদিহি চাইতেই পারেন! তারওপর যে ব্যাটার এমন উইকেটে সেট হওয়ার পরও বাজে শটস খেলে নরম কায়দায় আউট হন, তার ভুলের মাত্রা তো আরো বেশি।

ঢাকা টেস্টের প্রথমদিনে সেই প্রথম উইকেট থেকে শেষ পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে এমন ভুলই করে গেল বাংলাদেশ। হাফসেঞ্চুরি পেরুনো জুটি হলো মাত্র একটা। মুশফিকুর রহিম ও শাহাদাত হোসেন দীপুর ৫৮ রানের জুটিই এই ইনিংসে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ। বাংলাদেশ ইনিংসের ৬৬.২ ওভারের মধ্যে নিউজিল্যান্ডের দুই পেসার বোলিং করলেন মাত্র ৯.২ ওভার। যাতে টিম সাউদির বোলিং বিশ্লেষণটা একটু অন্যরকম। সকাল-বিকেল মিলিয়ে দুই স্পেলে মাত্র ৫.২ ওভার বল করলেন নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক। কোনো রানই দিলেন না তিনি। শিকার করলেন এক উইকেট।

তবে এই টেস্টের প্রথমদিনেই স্পিনারদের পারফরমেন্স জানিয়ে দিল সামনের বাকি সময়টাও সম্ভবত শুধুই তাদের।

স্কোরকার্ড:

বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস (প্রথমদিনে চা বিরতিতে): বাংলাদেশ ১৪৯/৮ (৫৮ ওভারে, জাকির হাসান ৮, মাহমুদুল ১৪, শান্ত ৯, মুমিনুল ৫, মুশফিক ৩৫, দিপু ৩১, মিরাজ ২০, স্যান্টার ৩/৫৪, এজাজ ২/৫৪, ফিলিপ্স ২/২১) নিউজিল্যান্ড প্রথম ইনিংস: ৫৫/৫।

সম্পর্কিত খবর