বৃষ্টি ও আলোর লুকোচুরির দিনে ঢাকা টেস্টে ওয়ানডে ব্যাটিং!
অবশেষে বৃষ্টি থামলো। খেলা শুরু হলো। নিউজিল্যান্ড প্রথম ইনিংসে খানিকটা লিড পেল। বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে ২ উইকেট হারিয়ে তুলল ৩৮ রান। এরমাঝে দিনভরের মেঘলা আকাশ আরো বেশি মেঘলা। মাঠে যথাযথ আলোর অভাব। ফ্লাডলাইট জ্বালিয়েও খেলার জন্য যথেষ্ট সেই আলোর অভাব দুর করা গেল না। দীর্ঘসময় খেলা স্থগিত থাকলো। আম্পায়াররা অপেক্ষায় থাকলেন আলোর জন্য। কিন্তু দু’ঘণ্টার বেশি অপেক্ষার পরও খেলার জন্য পর্যাপ্ত আলো যে মিললো না। বিকেল ৪টা ১০ মিনিটে দিনের খেলা আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ বলে ঘোষণা এলো। এই আলো-আঁধারের লুকোচুরি, অপেক্ষা এবং সবমিলিয়ে ৭ উইকেট পতনের মধ্যে দিয়ে শেষ হলো ঢাকা টেস্টের তৃতীয়দিনের খেলা।
সবমিলিয়ে এদিন ৩২.৩ ওভারের খেলা হলো। দুই দলের সঞ্চয় মিলিয়ে স্কোরবোর্ডে রান জমা হলো ১৬৩। উইকেট পড়লো ৭টি। এই হিসেব নিকেষ জানাচ্ছে প্রথমদিনের মতো এদিন রান ও উইকেটে অসমতা নেই। এই মেয়াদে ওভারপ্রতি রান গড় ৫.০৪। টেস্ট ক্রিকেটে এই রানের হার যে ‘বিপুল স্বাস্থ্যকর’! দু’দলই জানে মিরপুরের এই উইকেটে টিকে থেকে লাভ নেই। এখানে যতদ্রুত যত বেশি রান জমা করা যাবে, সেটাই হবে বড় সঞ্চয়। সেটাই ম্যাচে নিরাপত্তা দেবে। আর তাই নিউজিল্যান্ডের শেষের পাঁচ ব্যাটারের মতো বাংলাদেশও তাদের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট হাতে আক্রমণাত্মক মেজাজে ছিল। তবে সমস্যা হলো আক্রমণে গেলে ঝুঁকিও থাকবে। সেই ঝুঁকি নিতে গিয়েই কাটা পড়লেন বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। আর ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয় তো টিকতেই পারলেন না। দ্বিতীয় ইনিংসের তৃতীয় বলেই স্লিপে ক্যাচ তুলে ফিরলেন মাহমুদুল।
৩ রানে প্রথম উইকেট হারানোর পর বাংলাদেশের ইনিংসকে সামনে বাড়ান ওপেনার জাকির হাসান ও অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। তবে সেই জুটিও বেশিদূর যেতে পারেনি। টিম সাউদির বলটা গ্লাভসে লাগার পর শান্ত মনোযোগ হারিয়ে বসেন। মাঠে চিকিৎসা নেন। কিন্তু ইনিংসটা লম্বা করতে পারেননি। সাউদির লেন্থ বল অফসাইডে ড্রাইভ করতে গিয়ে সহজ ক্যাচ তুলে দিয়ে ফিরেন। স্কোরবোর্ডে দলের রান তখন ৩৮।
দলের সেই স্কোর আর বাড়েনি। দিনের বাকিটা সময় আলোর স্বল্পতার জন্য খেলাই যে আর হলো না। চতুর্থদিনের সকালে ওপেনার জাকির হাসান ও মুমিনুল হক এখন কোন কৌশলে ব্যাট চালান সেটাই দেখার অপেক্ষা। বৃষ্টি এবং আলোর স্বল্পতা এই ম্যাচের অনেক সময় খেয়ে ফেলেছে। ম্যাচের বাকি আর মাত্র দুটো দিন। তবে মিরপুরের স্পিন উইকেট এখনো ব্যাটারদের বড় পরীক্ষা নেওয়ার অপেক্ষায়।
এই উইকেটে স্পিন যেভাবে ছোবল দিচ্ছে তাতে নিউজিল্যান্ডের জন্য চতুর্থ ইনিংসে ২০০/২৩০ রানের টার্গেটই সম্ভবত যথেষ্ট হবে। সেই চ্যালেঞ্জটা দেওয়ার জন্য নিজেদের ‘ব্যাটিং চ্যালেঞ্জে’ আগে বাংলাদেশকে জিততে হবে। হাতে থাকা বাকি ৮ উইকেটে মিরপুরের পিচে আর কতদূর যেতে পারবে বাংলাদেশ? এই ম্যাচে হারজিত এবং সিরিজের সমাধান যে ওই প্রশ্নের উত্তরেই।
ঢাকা টেস্ট স্কোরকার্ড:
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস ( তৃতীয়দিন শেষে ):
বাংলাদেশ ১৭২/১০ (৬৬.২ ওভারে, জাকির হাসান ৮, মাহমুদুল ১৪, শান্ত ৯, মুমিনুল ৫, মুশফিক ৩৫, দিপু ৩১, মিরাজ ২০, সোহান ৭, নাঈম হাসান ১৩, তাইজুল ৬, শরিফুল ১০, অতিরিক্ত ১৪ স্যান্টার ৩/৬৫, এজাজ ২/৫৪, ফিলিপস ৩/৩১)
নিউজিল্যান্ড প্রথম ইনিংস: ১৮০/১০ ( ৩৭.১ ওভারে, ল্যাথাম ৪. কনওয়ে ১১, উইলিয়ামসন ১৩, নিকোলস ১, মিচেল ১৮, ব্লানডেল ০, ফিলিপস ৮৭, স্যান্টার ১, জেমিসন ২০, সাউদি ১৪, এজাজ ০, অতিরিক্ত ১১, মেহেদি ৩/৫৩, তাইজুল ৩/৬৪, নাঈম ২.২১, শরিফুল ২/১৫)।
বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস: ৩৮/২ (৮ ওভারে, মাহমুদুল ২, জাকির হাসান ১৬, শান্ত ১৫, মুমিনুল ০, অতিরিক্ত ৫, সাউদি ১/৮, এজাজ ১/১৩)