দুজন ফেল, ‘ভোটের ম্যাচে’ খেলার জয়জয়কার

দুজন ফেল, ‘ভোটের ম্যাচে’ খেলার জয়জয়কার

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। নির্বাচনে সংসদ সদস্য হওয়ার বাসনা নিয়ে প্রার্থী হয়েছিলেন ক্রীড়াঙ্গনের অনেক নামকরা ব্যক্তিত্ব। সে দৌড়ে সাবেক ও বর্তমান ক্রীড়াবিদরা যেমন ছিলেন, অনেক ক্রীড়া সংগঠকও জনপ্রতিনিধি হতে লড়াই করেছেন ভোটের মাঠে। ৭ জানুয়ারি (রবিবার) ভোটের দিনশেষে তাদের বেশিরভাগ মুখেই হাসি ফুটেছে। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে অনেকটা হেসেখেলেই ভোটের মাঠে বিজয় অর্জন করেছেন তারা।

ভোটের মাঠে এবার ক্রীড়াঙ্গনের সবচেয়ে আলোচিত নাম নিঃসন্দেহে সাকিব আল হাসান। বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়কের সংসদ সদস্য হওয়ার আকাঙ্ক্ষা দীর্ঘদিনের। ২০১৮ সালের নির্বাচনেও প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। তবে তার দল আওয়ামী লীগের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশে বিরত ছিলেন। এবার আর তার প্রার্থী হওয়ার পথে কোনো বাধা ছিল না। বলা যায়, নির্বাচিত হওয়ার পথেও কোনো প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়নি তাকে।

নিজ জেলা মাগুরার ১ নম্বর আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন নির্বাচনে। প্রায় ১ লাখ ৮৫ হাজার ৩৮৮ ভোট পেয়ে বিপুল বিজয় অর্জন করেছেন তিনি। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বাংলাদেশ কংগ্রেসের প্রার্থী কাজী রেজাউল হোসেন ডাব প্রতীকে পেয়েছেন ৫ হাজার ৯৯৪ ভোট। এই আসনে ভোট পড়েছে মোট ৪৮.৩৮ শতাংশ। এর মধ্য দিয়ে প্রথমবার সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হলেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার।

সাকিবের জয়ের দিনে তার একসময়ের জাতীয় ক্রিকেট দলের সতীর্থ এবং সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজাও নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন। নড়াইল-২ আসন থেকে দ্বিতীয়বারের মতো সংসদে নিজ আসনের জনগণের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পেয়েছেন ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’। নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করে ১ লাখ ৮৯ হাজার ১০২ ভোট পেয়েছেন মাশরাফি, ভোটের মাঠে জয়ের জন্য যা তার জন্য ছিল যথেষ্ট।

খুলনা-৪ আসন থেকে দ্বিতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন সাবেক জাতীয় ফুটবলার এবং বাফুফের সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী। স্বতন্ত্র প্রার্থী এসএম মোর্ত্তজা রশিদী দারার বিপক্ষে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করে বিজয় ছিনিয়ে নিয়েছেন এই সাবেক ফুটবলার। বেসরকারি ফলাফলে জানা যায়, এসএম মোর্ত্তজা ৬০ হাজার ৬৩৯ ভোট পেয়েছিলেন, কিন্তু ৮৫ হাজার ৬৪৭ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন নৌকার প্রার্থী মুর্শেদী।

তবে জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক এবং সাবেক ক্রীড়ামন্ত্রী আরিফ খান জয় হেরে গেছেন বড় ব্যবধানে। নেত্রকোনা-২ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রতীকে নির্বাচনে লড়াই করে প্রায় ২০ হাজার ভোটে হেরেছেন এই সাবেক ফুটবলার।

ভোটের মাঠে শেষ হাসি হেসেছেন অনেক ক্রীড়া সংগঠক। কিশোরগঞ্জ-৬ আসন থেকে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের পুত্র এবং বর্তমান বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন নির্বাচিত হয়েছেন। ভৈরব-কুলিয়ারচর নিয়ে গঠিত কিশোরগঞ্জ-৬ আসনে ভূমিধস জয় পেয়েছেন এই ক্রীড়া সংগঠক। ১ লাখ ৯৮ হাজার ১৫৫ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন পাপন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে ১ লাখ ৯৫ হাজার ৯০ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন তিনি।

নির্বাচিত হয়েছেন বিসিবির সাবেক দুই সভাপতি আহম মুস্তফা কামাল এবং সাবের হোসেন চৌধুরীও। কুমিল্লা-১০ (লাঙ্গলকোট, সদর দক্ষিণ ও লালমাই) আসন থেকে ২ লাখ ৩২ হাজার ৬৯৯ ভোট পেয়ে টানা চতুর্থবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন মুস্তফা কামাল। অন্যদিকে ঢাকা-৯ আসনে নিজের রাজত্ব ধরে রেখেছেন সাবের, চতুর্থবারের মতো সংসদ সদস্যপদ পেয়েছেন এই ক্রীড়া সংগঠক। ভোট পেয়েছেন ৯০ হাজার ৩৯৬।

এদিকে মৌলভীবাজার-২ আসনে দারুণ কীর্তি গড়েছেন বিসিবির নারী কমিটির প্রধান শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল। আসনটিতে দলীয় প্রতীক নৌকা নিয়ে গত ২৭ বছরে কেউ নির্বাচিত হতে পারেননি। তবে প্রথমবার দলীয় মনোনয়ন পেয়ে সেটাই করে দেখালেন এই ক্রীড়া সংগঠক। বেসরকারি ফলাফলে ৭৩ হাজার ৫২৮ ভোট পেয়ে কুলাউড়া উপজেলা নিয়ে গঠিত এই আসনে বিজয় কেতন উড়িয়েছেন নাদেল। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী এ কে এম সফি আহমদ পান ১৫ হাজার ১৬৮ ভোট।

গাজীপুর-২ আসনে এবার কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ছিলেন বর্তমান যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল। গাজীপুরের প্রভাবশালী সাবেক সিটি মেয়র জাহাঙ্গীর আলম তার বিরোধী পক্ষকে সমর্থন দেয়ায় রাসেলের নির্বাচিত হওয়া নিয়ে কিছুটা শঙ্কাও ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত গাজীপুর সিটি করপোরেশন ও ক্যান্টনমেন্ট এলাকা নিয়ে গঠিত গাজীপুর-২ আসনে ১ লাখ ৩ হাজার ৯৮৬ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন তিনি।

বাফুফের দুই সহ-সভাপতি কাজী নাবিল আহমেদ এবং আতাউর রহমান ভূঁইয়া মানিক। যশোর-৩ আসনে নিজের ফর্ম ধরে রেখে টানা তৃতীয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন কাজী নাবিল। কিন্তু স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে কপাল পুড়েছে মানিকের। যশোর-৩ আসনে ১ লাখ ২১ হাজার ৭২০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন নাবিল। তবে নোয়াখালী-২ আসনে অল্পের জন্য জয় হাতছাড়া হয়েছে, হেরে গেছেন প্রায় ৪ হাজার ভোটের ব্যবধানে।

এছাড়াও সাবেক রেফারি এবং বাফুফের সহ-সভাপতি বীর বাহাদুর উশৈ সিং পার্বত্য বান্দরবান, ক্রীড়া সংগঠক এবং ঢাকা আবাহনীর চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান ঢাকা-১, রোলার স্কেটিং ফেডারেশনের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ জামালপুর-৫, স্কোয়াশ ফেডারেশনের সভাপতি ফারুক খান গোপালগঞ্জ-১, আবাহনী পরিচালক শাহরিয়ার আলম রাজশাহী-৬, আবাহনীর আরেক পরিচালক নসরুল হামিদ বিপু ঢাকা-৩ আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছেন।

সম্পর্কিত খবর