মুস্তাফিজের জন্য বিসিবির পরিস্কার বার্তা
চলতি আইপিএলে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন চেন্নাই সুপার কিংস এখন পর্যন্ত ছয়টি ম্যাচ খেলেছে। মুস্তাফিজের ম্যাচের সংখ্যা পাঁচ। মাঝে মার্কিন ভিসার জন্য দেশে ফিরে আসায় মুস্তাফিজ চেন্নাইয়ের হয়ে একটা ম্যাচ মিস করেছেন।
সেই ম্যাচটা ছিল সানরাইজার্স হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে। হায়দরাবাদের মাঠে সেই ম্যাচ হারে চেন্নাই। বিশাখাপত্তমে দিল্লি ক্যাপিটালসের বিরুদ্ধেও একটা ম্যাচ হারে চেন্নাই। সেই ম্যাচে অবশ্য একাদশে ছিলেন মুস্তাফিজ। ছয় ম্যাচে এখন পর্যন্ত চেন্নাইয়ের জয় চার ম্যাচে, দুটিতে হার। যে চারটি ম্যাচ জিতেছে চেন্নাই সেই ম্যাচগুলোতে অন্তত তিনটিতে মুস্তাফিজের পারফরম্যান্স ছিল উল্লেখ করার মতোই।
রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে তো এবারের টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচেই মুস্তাফিজ সেরা পারফর্মার। ২৯ রানে ৪ উইকেট নিয়ে সেই ম্যাচের ম্যাচসেরা ট্রফিও উঠেছিল মুস্তাফিজের হাতে। পাঁচ ম্যাচে সবমিলিয়ে মুস্তাফিজের শিকার ১০ উইকেট। দুই ম্যাচে একটু খরুচে বোলিং হয়েছে তার। কিন্তু বোলিং সঙ্গী সঙ্কট পুষিয়ে দেওয়ায় মুস্তাফিজের খরুচে বোলিং চেন্নাইয়ের জন্য তেমন বড় কোনো সমস্যা তৈরি করেনি। মুস্তাফিজকে একাদশে রেখেই সামনের পরিকল্পনা করছে চেন্নাই সুপার কিংস।
তবে সেই পরিকল্পনার রশি সম্ভবত এবার বাধ্য হয়েই গুটিয়ে নিতে হচ্ছে চেন্নাইকে। কারণ অবশ্য ভিন্ন। আইপিএলের মাঝপথেই মুস্তাফিজকে দেশে ফিরে যেতে হবে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সাফ জানিয়ে দিয়েছে, মে মাসের শুরুতে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টি সিরিজের দলে তারা মুস্তাফিজকে চায়। সেই সিরিজে মুস্তাফিজকে খেলতেই হবে।
বিসিবির নতুন নির্বাচক কমিটির প্রধান গাজী আশরাফ হোসেন লিপুও কদিন আগে জানিয়েছিলেন, বিশ্বকাপের প্রাক-প্রস্তুতির ক্রিকেট হবে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে এই সিরিজটি। তাই সেই সিরিজেই বাংলাদেশ দল বিশ্বকাপের পরিকল্পনা এবং রণসাজ সেরে নিতে চায়। পুরোমাত্রার শক্তিশালী দলকেই এই সিরিজে দেখতে চাই আমরা।
বিসিবির টিম অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস স্পোর্টস বাংলাকে জানান, আমরা মুস্তাফিজকে জিম্বাবুয়ে সিরিজের আগ পর্যন্ত নো অবজেকশান সার্টিফিকেট (এনওসি) দিয়েছি। তাকে সেই সিরিজের কদিন আগে চলে আসতে হবে।
জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচ ৩ মে। সেই হিসেবে মুস্তাফিজ আইপিএলে চেন্নাইয়ের হয়ে খেলার সুযোগ পাচ্ছেন ১ মে পর্যন্ত। ১৫ এপ্রিল মুম্বাইয়ের বিরুদ্ধে ম্যাচের পর ১ মে পর্যন্ত আরো ৪টি ম্যাচ খেলবে চেন্নাই। এর মধ্যে দুটি ম্যাচ লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টসের বিরুদ্ধে এবং ২৮ এপ্রিল চেন্নাই মুখোমুখি হবে সাইরাইজার্স হায়দরাবদের বিরুদ্ধে টুর্নামেন্টের ফিরতি ম্যাচে। এরপর সবশেষ ম্যাচটি সে খেলবে পাঞ্জাব কিংসের বিপক্ষে। এই কটি ম্যাচ খেলে পরদিন দেশে ফেরার ফ্লাইট ধরতে হবে মুস্তাফিজকে।
জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে সিরিজে খেলার চেয়ে আইপিএলে খেললেই বরং মুস্তাফিজের জন্য বেশি উপকার হতো। তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ক্রিকেট, কঠিন প্রতিপক্ষ, বিপুল দর্শকদের চাপ সামলানো, বিশ্বের সেরাদের সঙ্গে খেলা-এসব অনুষঙ্গ নিশ্চয়ই মুস্তাফিজ জিম্বাবুয়ে সিরিজে পাবেন না। কিন্তু আইপিএলে পাবেন।
তবে বিসিবির চিন্তা একটু ভিন্ন। মুলত জিম্বাবুয়ে সিরিজের দলকেই নিয়েই বিশ্বকাপের মঞ্চে নামতে চায় বাংলাদেশ। তাই পুরো দলকে একজোট করে রাখতে, দলের সবদিকের বাঁধন শক্তপোক্ত করতে সবক্রিকেটারকে এই সিরিজে খেলাতে চায় টিম ম্যানেজমেন্ট। তাই মুস্তাফিজের জন্য আইপিএলের ছুটি আর বাড়াতে নারাজ বিসিবি।
জালাল অবশ্য বলছিলেন, 'ওয়ার্ক লোডের বিষয়টাও আমাদের দেখতে হবে। ও অনেকগুলো ম্যাচ খেলে ক্লান্ত হয়ে গেলে বা ইনজুরিতে পড়লে তো আমাদের সঙ্কট বাড়বে। তাই ওয়ার্ক লোড ম্যানেজমেন্টের বিষয়টাও আমাদের নজরে রাখতে হবে।'
তবে প্রশ্ন হলো, আইপিএলে খেললে ওয়ার্কলোড বাড়বে, আর জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে খেললে সেটা কি বাড়বে না? বিসিবি এই প্রশ্নে নিরুত্তর!