টেস্ট ব্যাটিং যেন ভুলে গেছে বাংলাদেশ!

টেস্ট ব্যাটিং যেন ভুলে গেছে বাংলাদেশ!

প্রথম ইনিংসে ৫৩১ রান করা শ্রীলঙ্কার দ্বিতীয় ইনিংসে বড় ধস! ৬ উইকেট হারিয়ে তারা এই ইনিংসে তুলেছে ১০২ রান। তবে এই ধস তাদের তেমন বড় কোনো সমস্যায় ফেলছে না। কারণ বাংলাদেশ যে নিজেদের প্রথম ইনিংসে ১৭৮ রানে থেমে গিয়ে নিজেরাই সমস্যা সঙ্কুল। যে কায়দায় এই সিরিজে ব্যাটিং করেছে বাংলাদেশ তাতে মনে হচ্ছে টেস্ট ব্যাটিংই ভুলে গেছে গোটা দলটা!

তৃতীয়দিন শেষে চট্টগ্রাম টেস্টে শ্রীলঙ্কা এগিয়ে রয়েছে ৪৫৫ রানে। হাতে এখনো ৪ উইকেট জমা। সময় বাকি দুদিন। বাংলাদেশকে শেষ ইনিংসে চ্যালেঞ্জ জানানোর জন্য যথেষ্ট পুঁজি ইতোমধ্যেই যোগাড় করে ফেলেছে সফরকারীরা।

যে উইকেটে খানিক আগে শ্রীলঙ্কা ৫৩১ রানের বিশাল সংগ্রহ তুলেছে, সেই একই উইকেটে খানিকবাদে বাংলাদেশ গড়িয়ে শেষ ১৭৮ রানে! নিজেদের প্রথম ইনিংসে শ্রীলঙ্কা ১৫৯ ওভার ব্যাটিং করলো। বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হয়ে গেল মাত্র ৫৯.৪ ওভারে।

তুলনার জন্য আরো তথ্য আছে।

শ্রীলঙ্কার প্রথম ইনিংসের ৫৩১ রানে কোনো সেঞ্চুরি ছিল না। কিন্তু হাফসেঞ্চুরি ছিল ছয় ছয়টি। আর বাংলাদেশের দুশোর কমে থেকে যাওয়া ইনিংসে হাফসেঞ্চুরি মোটে একটি। শ্রীলঙ্কার ইনিংসে সেঞ্চুরির জুটি হলো একটি। হাফসেঞ্চুরির জুটি গড়ল তারা চারটি। অন্যদিকে বাংলাদেশের ১৭৮ রানের ইনিংসে সর্বোচ্চ রানের জুটি ৪৯। সেই জুটিতেও একটি নাম নাইটওয়াচম্যান হিসেবে নামা ব্যাটার তাইজুল ইসলাম!

চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের নিরীহ দর্শন উইকেটে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস যে মাত্র ১৭৮ রানে থেমে গেল, সেজন্য অন্য কোনোকিছুকে নয়; দায় এবং দায়ী কেবল ব্যাটারদের ব্যর্থতা। টেস্ট ব্যাটিংয়ের যে টেম্পারমেন্টের কথা গলা ফাটিয়ে ক্রিকেটাররা বলেন, তার ছিটেফোঁটা দেখাও যে মিলল না। একপ্রান্ত আঁকড়ে রেখে মুমিনুল হক খানিকটা ধৈর্য না দেখালে বাংলাদেশের যোগাড় যে এই ইনিংসে একশ’রও নিচে থাকতো বোধকরি!

বাংলাদেশকে ১৭৮ রানে অলআউট করে ৩৫৩ রানের লিড পায় শ্রীলঙ্কা। চাইলেই তারা বাংলাদেশকে ফলোঅন করাতে পারতো। তবে তা না করে তারা দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নামে। আর নেমে ব্যাটিং বিপর্যয়ের মুখে পড়ে সফরকারীরা। হাসান মাহমুদের বোলিং তোপে ৮৯ রানে হারিয়েছে ৬ উইকেট। ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্টেই পেসার হাসান মাহমুদ শিকার করেছেন ৪ উইকেট।

এদিন লঙ্কানদের ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই বাংলাদেশকে সাফল্য এনে দেন হাসান মাহমুদ। ৪ রানে ফেরান দিমুথ করুণারত্নেকে। এরপর কুশাল মেন্ডিসকে ফিরিয়ে জোড়া আঘাত করেন খালেদ আহমেদ। মাঝে নিশান মাদুশকা ও অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস জুটি গড়ে দলকে টানেন। তবে সেই জুটি বেশি দূর এগোতে দেননি হাসান। ৩৪ রানে ফেরান মাদুশকা।

দিনেশ চান্দিমাল ও ধনাঞ্জয়া ডি সিলভাকেও দ্রুতই সাজঘরের পথ ধরান হাসান। টেস্ট সিরিজে এই প্রথম ফিফটির কমে আউট হলেন লঙ্কান অধিনায়ক। এর আগে সিলেটে দুই ইনিংসে জোড়া সেঞ্চুরির পর চট্টগ্রামেও ছিলেন সেঞ্চুরির পথে। তবে সেঞ্চুরি না পেলেও ৭০ রান করেছিলেন তিনি। তবে দ্বিতীয় ইনিংসে তাকে বেশি দূর যেতে দেননি হাসান। ১ রান করে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে দিয়ে ফিরেন শ্রীলঙ্কান অধিনায়ক।

দুই ওপেনারকে বিদায়ের পর মিডলঅর্ডারের দুই শক্তিমান ব্যাটার দিনেশ চান্দিমাল ও ধনাঞ্জয়াকে দ্রুত ফিরিয়ে হাসান মাহমুদ দিনের শেষবেলাটা বাংলাদেশের জন্য আনন্দময় করে তোলেন। সতীর্থ সিনিয়র পেসার খালেদ আহমেদও অন্যপ্রান্ত থেকে উইকেট শিকারে নামেন। শুরুতেই কুশাল মেন্ডিস এবং সিরিজে ব্যাট হাতে ডেঞ্জারম্যান হয়ে উঠা কামিন্দু মেন্ডিসকে সিঙ্গেল ডিজিটে ফেরান খালেদ আহমেদ।

উইকেট শিকারের এই আনন্দযজ্ঞে এদিনও যথারীতি বাংলাদেশের ফিল্ডারদের পিচ্ছিল হাত গলে বেশ কয়েকটি ক্যাচ পড়ে। বিশেষ করে বাংলাদেশের স্লিপ ক্যাচিং ক্রমশ হাস্যকর হয়ে উঠছে!

চলতি সিরিজের পেছনের তিন ইনিংসে বাংলাদেশ কোনোবারই ২০০ রানও পেরুতে পারেনি! সিলেটে ১৮০র পিঠে ১৮৮ রানে অলআউট। চট্টগ্রামে প্রথম ইনিংস শেষ আরো কম রানে, ১৭৮! চতুর্থ ইনিংসে রান তাড়ার জন্য বাংলাদেশের সামনে অপেক্ষা করছে অনেক অনেক বড় টার্গেট। এখনই সেই সংখ্যাটা ৪৫৫ রান। আজ সকালের সেশনে শ্রীলঙ্কা মারকাটারি ব্যাট চালিয়ে সেই টার্গেট আরো বড় করার জোরদার চেষ্টা চালাবে।

বাংলাদেশের স্কোর এবার কতদূর যাবে। একটু জানিয়ে দেই, উইকেটে কিন্তু তৃতীয়দিনেই বেশ ভালো স্পিন ধরেছে। শেষ দুদিনে সেই ঘূর্ণি আরো বাড়বে। টেস্ট সিরিজের ট্রফিতে একহাত রাখা শ্রীলঙ্কা এখন সিরিজ ২-০ করার সমস্ত আয়োজন ব্যাটিং পর্বে সেরে ফেলেছে।

দেখার বিষয় পুরো সিরিজে ব্যাটিং ব্যর্থতার পরিচয় থেকে বেরিয়ে আসার কোনো উপায় বাংলাদেশ শেষ ইনিংসে খুঁজে পায় কিনা?

সম্পর্কিত খবর